বাংলাদেশের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ ডট শপের বিরুদ্ধে ৩৫৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। গুলশান থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা, যিনি পরে বরখাস্ত হন, সরকারি চাকরির আড়ালে ই-অরেঞ্জ পরিচালনা করতেন। তিনি এবং তাঁর আত্মীয়স্বজনই মূলত এ মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে এক পরিবারের দুই ভাই, যাঁরা আরপি করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক, এবং অল জোন নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা।
সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দাখিল করা অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে গুলশান থানায় মামলার পর প্রায় তিন বছর পর এই অভিযোগপত্র জমা হয়েছে।
ই-অরেঞ্জ ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তিন বছরের ব্যবধানে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে ব্যবসা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ‘ডাবল টাকা ভাউচার অফার’ দিয়ে অস্বাভাবিক কম দামে মোটরসাইকেল, মুঠোফোন, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশনসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়। এভাবে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৭০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৯৫৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ই-অরেঞ্জ। কিন্তু অনেক গ্রাহক অগ্রিম টাকা দিয়েও পণ্য পাননি, আর এসব অর্থই পরবর্তীতে মানি লন্ডারিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।
অভিযোগপত্রে ১২ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রধান আসামি হিসেবে রয়েছেন শেখ সোহেল রানা, তাঁর বোন সোনিয়া মেহজাবিন, সোনিয়ার স্বামী মাসুকুর রহমান এবং সোহেল-সোনিয়ার খালু মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ, যিনি রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী। এছাড়া দুই সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) নাজমুল আলম রাসেল ও মঞ্জুর আলম পারভেজও মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী জিল্লুর রহমান মোস্তফা জানিয়েছেন, ৩৫৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে ১২ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে এবং বর্তমানে বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন।
এসএসএলের চেয়ারম্যান সাবরিনা ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম এবং চিফ এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার নূরুল হুদাও মামলার আসামি। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তাঁরা বেশি কমিশন পাওয়ার আশায় ই-অরেঞ্জের মানি লন্ডারিংয়ে সহায়তা করেছেন।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ই-অরেঞ্জ ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখায় ২৯৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৬০৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা স্থানান্তর করেছে, যা মোট ৯০০ কোটি ২১ লাখ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের মধ্যে ৫৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার ৩৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আদালতের নির্দেশে জব্দ আছে এবং ২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা কমিশন হিসেবে এসএসএল নিয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে অনেক সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য এসএসএল সরকারি কোনো সংস্থায় দাখিল করেনি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া গেটওয়ে লাইসেন্সের শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
ই-অরেঞ্জের প্রথম সিওও নাজমুল আলম রাসেল সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইটের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। তিনি পরে তাঁর ভাই মঞ্জুর আলম পারভেজকেও ই-অরেঞ্জে নিয়োগ দেন। এই দুই ভাই আরপি করপোরেশনেরও মালিক।
শেখ সোহেল রানা ভারতে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন এবং বর্তমানে জামিনে আছেন। তাঁর বোন সোনিয়া মেহজাবিন ও স্বামী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের অধ্যাপক সুবর্ণ বড়ুয়া বলেন, “যেহেতু অভিযোগপত্র জমা হয়েছে, সেহেতু আমরা এখন বিচারকাজ শুরু ও শেষ হওয়ার আশা করতে পারি।”
এ বিষয়ে আরো তথ্য জানা গেলে তা জনসমক্ষে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।