বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর রবি আজিয়াটা লিমিটেড এবং এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের একীভূতকরণের অনুমোদন প্রদান করে। বিটিআরসির দেওয়া প্রজ্ঞাপনের ২০ নম্বর শর্তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল যে, একীভূতকরণের পর কোম্পানিটি শুধুমাত্র রবি আজিয়াটা লিমিটেডের নামেই সব পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপন বাজারজাত করবে। তবে বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, রবি আজিয়াটা এখনও পূর্বের মতো রবি ও এয়ারটেল দুটি ব্র্যান্ডের পণ্য ও সেবা বাজারজাত করছে, যা বিটিআরসির শর্তের প্রতি সঠিক সম্মান প্রদর্শন করছে না।
এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে এয়ারটেল ব্র্যান্ডের নামেই বিভিন্ন রিচার্জ অফার, ইন্টারনেট সেবা, রোমিং সুবিধা, আন্তর্জাতিক কল ট্যারিফ এবং গেমিং সেবার বিজ্ঞাপন রয়েছে। ফলে কোম্পানির এ কার্যক্রম বিটিআরসির নির্দেশনার লঙ্ঘন বলেই মনে হচ্ছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন বলেন, “যদি চুক্তিতে এয়ারটেলের নাম ব্যবহারের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা না হয় এবং রবি নাম ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকে, তাহলে তারা এয়ারটেল ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে পারবে না। এটি কন্ট্রাক্ট ল লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, সেটি তাদের দায়ীত্ব।”
এর আগে ২০২২ সালে বিটিআরসি এয়ারটেল ব্র্যান্ডের নামের আওতায় বিভিন্ন ভয়েস ও ডাটা প্যাকেজের প্রচার-প্রসার বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে দায়ের হওয়া একটি অভিযোগের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কমিশন তখন বলেছিল, এয়ারটেল নামে কোনো প্যাকেজ অফার করা যাবে না এবং চলমান প্যাকেজগুলোর মেয়াদ শেষ হলে তা নবায়ন করা যাবে না।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম জানান, “এয়ারটেল আমাদের সাব-ব্র্যান্ড। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার মাধ্যমে আমরা এয়ারটেল ব্র্যান্ডসহ এর সব ট্রেডমার্ক ও মেধাস্বত্ব অধিকার অর্জন করেছি।” তিনি বলেন, “একই কোম্পানির অধীনে একাধিক ব্র্যান্ড থাকা টেলিকম ও ভোগ্যপণ্য শিল্পে একটি স্বাভাবিক ঘটনা।”
তবে, এই দাবির পক্ষে কিছু বৈশ্বিক উদাহরণ উল্লেখ করলেও কোম্পানির বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একীভূতকরণের সময়ে যদি এয়ারটেলের অনুমোদন না থাকে, তবে রবি সেই ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, “বাংলাদেশে বিভিন্ন টেলিকম প্রতিষ্ঠানের অধিগ্রহণের পরে নাম পরিবর্তনের নজির রয়েছে। বর্তমানে তরুণদের মধ্যে এয়ারটেল নামের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এজন্য হয়তো তারা পরিবর্তন করছে না।”
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানান, “আমরা আইনিভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” তিনি বলেন, “এ মুহূর্তে বিষয়টি আমার ধারণার মধ্যে নেই, তবে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”
একীভূতকরণের প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিটিআরসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে একীভূতকরণের আবেদন করা হয়। একীভূতকরণের প্রক্রিয়া ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করে এবং প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ১৬ নভেম্বর ২০১৬ থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে রবি।
রবি ও এয়ারটেলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আলোচনা এবং বিটিআরসির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে বাজারে উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষ এই সংকট মোকাবেলায় কী ব্যবস্থা নেয় এবং কোম্পানিটির সাব-ব্র্যান্ড ব্যবহারের ভবিষ্যৎ কী হবে।