দেশের শিল্পখাতের উন্নয়নে সরকারের ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) নীতি বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। গতকাল ডিসিসিআইর আয়োজিত ‘এসএমই নীতিমালা ২০১৯-এর সংস্কার: প্রেক্ষিত টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, এসএমই নীতিমালার উদ্দেশ্য এবং পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে শিল্পনীতির সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন, যাতে শিল্পখাতের ভবিষ্যতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যায়।
সভায় বক্তারা জানান, সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বাজেটের অভাব, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাব এসব বাধার মধ্যে অন্যতম। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সলিম উল্লাহ এ বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আন্তর্জাতিক মানের এসএমই নীতিমালা প্রণয়নের কার্যক্রম চলছে এবং তিনি আশা করেন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কার্যকর নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গণী শোভন বলেন, নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি আসন্ন এসএমই নীতিমালায় ‘আরবিট্রেশন’ ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এসএমই উন্নয়নের জন্য নীতিমালার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলোর অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য। তিনি জানান, ইপিবি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে এবং উদ্যোক্তাদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে।
বিসিকের পরিচালক কাজী মাহবুবুর রশিদও উদ্যোক্তা উন্নয়নে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি বিসিককে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন জানান, দেশের মোট এসএমইর ৭০ শতাংশই মাইক্রোক্রেডিট ফাইন্যান্সিং ইনস্টিটিউটগুলোর মাধ্যমে ঋণ পেয়ে থাকে, এর মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। তিনি ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর গুরুত্ব দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা জানান, এসএমই নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যপরিধি সুনির্দিষ্ট করা জরুরি। কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিকাশে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাবও তার রয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, এসএমই নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়নি ফলে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর ফল অর্জন সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এই খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কায়েস হামিদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম’-এর কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, এভাবে উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন আরও সহজ হবে।
সভা থেকে প্রতীত হয়, সরকারের এসএমই নীতির বাস্তবায়ন জন্য সমন্বয়, অর্থায়ন এবং কার্যকর নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারের কার্যক্রম এবং পরিকল্পনা আরো শক্তিশালী করার তাগিদ এসেছে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।