রোববার ২০ অক্টোবর, বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত অকশনে ৯১ দিনের ট্রেজারি বিল কেনার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ১১.৭৫ শতাংশ সুদে টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের ক্ষেত্রে সুদহার ১১.৯০ শতাংশ এবং ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলে ১১.৯৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ১৪ অক্টোবরের তুলনায় এসব সুদহার ১১ থেকে ৩০ বেসিস পয়েন্ট বেশি।
সরকার সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ট্রেজারি বিল এবং দীর্ঘমেয়াদী বন্ড বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ করে বাজেটের ঘাটতি মেটায়। তবে সুদের হার বৃদ্ধি মানে সরকারের ঋণ গ্রহণের খরচও বেড়ে যাচ্ছে, যা সুদ ব্যয়ে চাপ বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জানান, এদিনের অকশনে প্রায় ৯০০০ কোটি টাকার বিল বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদহারের জন্য বিড করায় এবং সরকারের তহবিলের প্রয়োজনীয়তা কম থাকায় সবগুলো বিল বিক্রি করা হয়নি। বিক্রি হয়েছে ৫৫০০ কোটি টাকার বিল।
এটি বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, সর্বশেষ গত মে মাসে ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়ানো হয়েছিল। তখন ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ১১.৬০ শতাংশ এবং ৩৬৪ দিনের বিলে ১২ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এর কিছুদিন পর সুদহার কিছুটা কমলেও সাম্প্রতিক নীতি সুদহার বৃদ্ধি আবারো সুদহারের উর্ধ্বগতির পথ উন্মুক্ত করেছে। গত বছরের একই সময় এই বিলগুলোর সুদহার ছিল ৯.২৫ থেকে ৯.৭৫ শতাংশের মধ্যে অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ২.২৫ থেকে ২.৫০ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এর প্রধান কারণ পলিসি রেট বা নীতি সুদহার বৃদ্ধির প্রত্যাশা। গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে যার ফলে বাজারের সুদহারও বাড়ছে। এক বেসরকারি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানান, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত দুই মাসে বেশ কয়েকবার পলিসি রেট বাড়িয়েছে এবং চলতি অক্টোবরে আরও একবার বাড়তে পারে। এর ফলে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেওয়ার খরচ বাড়ছে, যা ট্রেজারি বিল কেনার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও সেপ্টেম্বর মাসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পলিসি রেট বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সংকুলানমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে এবং আগামী মার্চ বা এপ্রিল নাগাদ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে বলে আশা করছি।”
বর্তমানে নীতি সুদহার ৯.৫০ শতাংশ। তবে গভর্নরের মতে, এটি আগামীতে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। চলতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই তিনবার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে। সবশেষ ২৫ আগস্ট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় নীতি সুদহার ৯ শতাংশে উন্নীত করা হয়।
সরকারের ঋণ নীতিতে এই পরিবর্তনগুলো ব্যাংকিং খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার বিভিন্ন মেয়াদের ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ৪৭হাজার ২০৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৩ শতাংশ বেশি।