২০২৪ সালের প্রথমার্ধে দেশের ব্যাংকগুলো তাদের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) ফান্ডের প্রায় অর্ধেকই ব্যয় করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩০৯ কোটি টাকা সিএসআর খাতে খরচ হয়েছে, যার মধ্যে ১৩৮ কোটি টাকাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যয় করা হয়েছে।
অর্থের এই ব্যয়ের বড় অংশ মূলত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরিচালিত তহবিলগুলোতে জমা দেওয়া হয়, যা ৫ আগস্টের আগে সম্পন্ন হয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংক তাদের সিএসআর ফান্ডের ২০ শতাংশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করতে বাধ্য। এই নীতিমালা মেনেই ব্যাংকগুলো দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় সহায়তা প্রদান করেছে, যার মধ্যে দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সরবরাহ উল্লেখযোগ্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রথমার্ধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সর্বাধিক অনুদান দেওয়া হয়েছে, যা গত ছয় মাসের তুলনায় সামগ্রিক সিএসআর ব্যয়ের একটি বড় অংশ।
স্বাস্থ্য খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় ছিল ৭১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, যা মোট সিএসআর ব্যয়ের ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। এই অর্থ মূলত দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিক নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যদিকে, শিক্ষাখাতে ব্যয় হয়েছে ৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এ খাতের অর্থের বড় অংশই শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানে ব্যবহৃত হয়েছে।
তবে, ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় কিছুটা কমেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। ২০২৩ সালের শেষার্ধে ব্যাংকগুলো এই দুই খাতে তুলনামূলক বেশি ব্যয় করেছিল।
খেলাধুলা ও সংস্কৃতি খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ব্যয়িত হয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট সিএসআর ব্যয়ের সবচেয়ে কম অংশ। পরিবেশ খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের মধ্যে বৃক্ষরোপণ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন সংক্রান্ত প্রকল্পে অনুদান অন্যতম।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন তহবিলে অর্থ জমা দিতে বাধ্য হওয়ার কারণে সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয়ের ধারা কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকাররা। এবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ দিয়েছে।
ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিচালিত বিভিন্ন তহবিলে আমাদের অর্থ জমা দিতে হয়েছে এবং এখানে আমাদের কোনো বিকল্প ছিল না।”
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, “দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমাদের মনোযোগ কিছুটা কমে যায়।”
২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয়ের ধারা থেকে বোঝা যায় যে, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে একটি জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।