ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার সব সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, যা কার্যকর করা হয়েছে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩২৮ এর অধীনে।
নতুন এই আদেশ অনুসারে, উল্লিখিত সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোর সব সরকারি চাকরিজীবীদের বাধ্যতামূলকভাবে www.etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি দেশের ব্যাংক খাত, মোবাইল টেলিকম কোম্পানি এবং একাধিক শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার আওতায় আনা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটি), ম্যারিকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস, বাটা স্যু কোম্পানি এবং নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এনবিআরের বিশেষ আদেশটি অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতার প্রসারে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশব্যাপী করদাতাদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত করতেই এই আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে এনবিআর জানিয়েছে।
অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের উদ্যোগ নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই এ বিষয়ে নানামুখী প্রচার-প্রচারণা চালানো হলেও, করদাতাদের তেমন সাড়া মেলেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনবিআরের প্রস্তুতির ঘাটতি এবং করদাতাদের সচেতনতার অভাব এর প্রধান কারণ।
২০২৩ সালে ট্যাক্স রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের বাধ্যবাধকতা চালু করা হলেও মাত্র ১০ শতাংশ করদাতা তা অনুসরণ করেছেন। এনবিআর আশা করছে এবারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আরও বেশি সংখ্যক করদাতা ডিজিটাল পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করবেন। এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, নতুন আদেশের ফলে প্রায় ১০ লাখ নতুন করদাতা অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য হবেন।
এদিকে, এনবিআর অনলাইনে রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া সহজতর করতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে চালু করা হয়েছে একটি হেল্প ডেস্ক, যা করদাতাদের সরাসরি সহায়তা দেবে। এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিচ্ছেন। তিনি কর ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ওপর জোর দিয়ে ট্যাক্স রিটার্ন জমা প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও করদাতাবান্ধব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দেশে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ধারী ব্যক্তির সংখ্যা বর্তমানে ১ কোটির ওপরে। তবে ২০২৩ সালে আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছিল মাত্র ৪০ লাখ। এনবিআর আশা করছে, অনলাইনে রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা চালুর মাধ্যমে রিটার্ন জমার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এর ফলে দেশের রাজস্ব আয় বাড়বে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
করদাতাদের অনলাইন রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে সরকার রাজস্ব প্রশাসনকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করতে চাইছে। এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে করদাতাদের সেবা সহজ করতে এবং কর ফাঁকির সুযোগ কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য রাজস্ব বাড়ানো এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।