বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৪.৫ শতাংশে নামিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চলতি অর্থবছরের জন্য এপ্রিলে আইএমএফ ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল কিন্তু বর্তমান প্রতিবেদনে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়ে ৪.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই সংশোধন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
আইএমএফ-এর ওয়াল্ড ইকোনমিক আউটলুকের সর্বশেষ সংস্করণ আজ প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে- মহামারি প্রভাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছর বাদে গত ২০ বছরের মধ্যে এটি বাংলাদেশের জন্য সংস্থাটির সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস। প্রতিবেদনটিতে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যদিও বৈশ্বিক অর্থনীতির অনেক দেশ মূল্যস্ফীতির চাপ কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে তবুও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি উচ্চ মাত্রায় বজায় থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এক বছর আগে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৭ শতাংশ, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পৌঁছাতে পারে ১০.৭ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৪ শতাংশে পৌঁছাবে। প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সাম্প্রতিক বন্যার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এর আগে বিশ্বব্যাংক ৫.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল, যা বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে একটি বড়সড় পরিবর্তন।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর আগে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.১ শতাংশে নামিয়েছে। অর্থনীতির এই নিম্ন প্রবৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর চাপ বাড়ছে এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থায় সরকারের জন্য জরুরি যে, তারা একটি কার্যকরী ও সুদৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করে যাতে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন এবং জনকল্যাণমুখী উদ্যোগগুলোকে সামনে আনতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের সরকার এবং নীতিনির্ধারকরা এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে কি ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি সুস্থ অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরিতে তারা কি কোনো পদক্ষেপ নেবেন সেটিই এখন সময়ের দাবি।