চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা বেশি হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন, সরকারের পরিবর্তন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) তথ্য বলছে, প্রান্তিকের শেষে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বড় ধরনের ঘাটতি দেখা গেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সরকার মাত্র ৭০ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে পেরেছে, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা কম। ফলে এ বছর রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হয়ে উঠেছে।
বিশ্বব্যাংকও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। ৫ শতাংশের ওপরে যে প্রবৃদ্ধি আশা করা হয়েছিল, তা এখন ৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা মহামারি-পরবর্তী সময়ের কাছাকাছি। অর্থনীতির এই মন্দা প্রবৃদ্ধি রাজস্ব আদায়ের ওপরও প্রভাব ফেলছে, যা অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, “জুলাই ও আগস্ট মাসের ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব রাজস্ব আদায়ে বড় আকারে পড়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ে দ্রুত কোনো উন্নতি আশা করা যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “চলমান অস্থিরতা থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরও সময় লাগতে পারে, সম্ভবত ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে।”
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম প্রান্তিকে আমদানি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৭ শতাংশ ও ১০ শতাংশ কমেছে। আয়কর আদায় তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও সামগ্রিকভাবে তা রাজস্ব ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব আদায় বাড়ার কথা ছিল, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আমদানির নিম্নমুখী প্রবণতা এই সম্ভাবনাকে ব্যাহত করেছে।
অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই-আগস্টে রাজস্ব বৃদ্ধির সুযোগ থাকলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তা বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, সেপ্টেম্বরে কিছুটা উন্নতির ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।”
অন্যদিকে, আমদানি কমে যাওয়াও রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, প্রথম দুই মাসে আমদানি ১৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ডলার সংকট এবং অর্থনৈতিক চাপের কারণে হয়েছে। এতে রাজস্ব আয়ের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈশ্বিক আর্থিক সহায়তা এবং অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কৌশলগত নীতি গ্রহণের মাধ্যমেই এ সংকট কাটিয়ে ওঠার পথ তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।