বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, তবে চ্যালেঞ্জের শেষ নেই। তথ্যপ্রাপ্তি, মূলধন জোগান, সামাজিক সুরক্ষা- এসবের অভাবেই নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। এরই মধ্যে, নারীদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি নতুন কৌশল ঘোষণা করেছে। এই কৌশলের লক্ষ্য- নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সামগ্রিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা, ইন্টারনেট ও ডিজিটাল সুযোগের মাধ্যমে তাদের তথ্যপ্রাপ্তি সহজ করা এবং ব্যবসার জন্য মূলধন জোগান বৃদ্ধি করা।
ওয়াশিংটনে সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভায় উন্মোচন করা হয়েছে এই নতুন ‘জেন্ডার স্ট্র্যাটেজি ২০২৪-৩০’। এতে নারী ক্ষমতায়নের তিনটি স্তম্ভকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে- সামাজিক সুরক্ষা, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের প্রবেশাধিকার এবং মূলধন সহায়তা।
বিশ্বব্যাংকের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ কোটি নারীকে ইন্টারনেট পরিষেবার আওতায় আনা, যা তাদেরকে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল ও আর্থিক সেবায় প্রবেশে সহায়তা করবে। নতুন কৌশলে দরিদ্র ও প্রান্তিক নারীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৫ কোটি নারী সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আসবেন এবং আট কোটি নারী ও নারী নেতৃত্বাধীন ব্যবসা পাবেন মূলধন সহায়তা। এতে নারীদের উদ্যোক্তা হিসাবে এগিয়ে আসার পথে সম্ভাব্য বাধাগুলো কমানো যাবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,
“নারীদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ শুধু বিশ্ব অর্থনীতিকেই চাঙ্গা করে না বরং তাদের পরিবার ও সমাজকেও শক্তিশালী করে।”
তার মতে, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ একইসঙ্গে অর্জিত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, “অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে আমরা দারিদ্র্য থেকে সরে আসার একটি সিঁড়ি তৈরি করছি এবং সেই সিঁড়ি দিয়ে আশা ও মর্যাদা প্রসারিত করছি।”
এই নতুন কৌশলটি প্রণয়ন করা হয়েছে ২০১৬-২৩ সালের ‘জেন্ডার স্ট্র্যাটেজি’ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা ও ফলাফলের ভিত্তিতে। ১১০টি দেশের এক হাজারের বেশি অংশীদারদের পরামর্শও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা নারীর ক্ষমতায়নে বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই লক্ষ্যগুলো অর্জিত হলে সমাজে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিবর্তন আসবে।
বর্তমান বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই ডিজিটাল মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল। তাই ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে লৈঙ্গিক সমতা আনয়নের প্রতি জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। সেসব দেশ যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ ও আর্থিক সম্পদের অভাব রয়েছে, সেখানেই বিশেষভাবে এই কৌশল বাস্তবায়ন করা হবে। নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে ডিজিটাল উদ্যোগে যুক্ত হতে পারে, সেজন্য ব্যাংক নীতি সংস্কারের পরামর্শও দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের নারী ক্ষমতায়নের প্রকল্পগুলো এরই মধ্যে আফ্রিকার ১৫টি দেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে। জাম্বিয়ার ৪০ লাখ নারীর ডিজিটাল নগদ স্থানান্তরের সুযোগ পাচ্ছেন, যেখানে প্রায় ৬০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ, ব্যবসায়িক মূলধন ও সঞ্চয় গোষ্ঠী তৈরিতে সহায়তা করা হচ্ছে। ইথিওপিয়ায় নারী মালিকানাধীন ব্যবসায় ঋণ সহায়তার মাধ্যমে পাঁচ বছরের মধ্যে মুনাফা ৩০ শতাংশ এবং কর্মসংস্থান ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের এই নতুন কৌশল নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য একটি বড় মাইলফলক হতে পারে। নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি শুধু তাদের জীবনমান উন্নত করবে না বরং বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি স্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তনও আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।