বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ধারাবাহিকভাবে লাভজনক অবস্থানে থাকার কারণে এখন নিজ অর্থায়নে জাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি, সরকারি ঋণ পরিশোধেও অগ্রসর হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির ৫২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গত অর্থবছরে ২৫০ কোটি টাকার মুনাফা অর্জন করেছে।
এ বছরের ৩০ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত শিপিং কর্পোরেশনের বোর্ড সভায়, শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়। এতে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, বিএসসি এবার দুইটি জাহাজ সম্পূর্ণ নিজস্ব খরচে কেনার পরিকল্পনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডোর মাহমুদুল মালেক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, “বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যবসা বৃদ্ধিতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়েছে।”
সরকারি ঋণ পরিশোধের বিষয়টি স্পষ্ট করে তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ-চীন সরকারের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে বিএসসি ৬টি জাহাজ ক্রয় করেছিল, যার অর্থ বাংলাদেশ সরকার প্রদান করেছে। বর্তমানে ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং ধাপে ধাপে পুরো ঋণ শোধ করা হবে।
কর্মকর্তাদের মতে, শিপিং কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিলে তৈরি নতুন দুটি জাহাজ কিনতে প্রায় ৭৫০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে, তবে প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ব্যয়ের অংকে পরিবর্তন আসতে পারে। এর আগে চীনের সাথে জি-টু-জি ভিত্তিতে ৬টি জাহাজ কেনা হয় যার জন্য ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে এসব জাহাজের মধ্যে পাঁচটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে পণ্য পরিবহনে নিযুক্ত।
শিপিং কর্পোরেশন চলতি মুনাফার ধারাবাহিকতা রক্ষার পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাত্র ১৭ কোটি টাকার মুনাফা হলেও, ছয় বছরের মধ্যে তা প্রায় ১,৩৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা মুনাফা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে চারটি দিককে চিহ্নিত করেছেন-পণ্য পরিবহনে শিপিং রেট বৃদ্ধি, বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ ভেসেলস (প্রটেকশন) আইন কার্যকর করা, এফডিআরের সুদের হার বৃদ্ধি এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি।
শিপিং কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্রেইট রেট বেড়েছে, যার ফলে বিএসসির রাজস্ব আয়ও মুনাফা বাড়ছে। এছাড়া ফ্ল্যাগ ভেসেল আইন কার্যকর হওয়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পণ্য আমদানিতে বিএসসির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।
মুদ্রামূল্যের পরিবর্তনও বিএসসির রাজস্ব বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। ডলারের মান যেখানে ৮২-৮৬ টাকার মধ্যে ছিল, তা বেড়ে বর্তমানে প্রায় ১২০ টাকা হয়েছে, যা বিএসসির জাহাজ ভাড়ার হারেও প্রভাব ফেলেছে এবং মুনাফা বাড়িয়েছে।
সংক্ষেপে, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীল অবস্থান তৈরি করে সরকারি ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি নিজস্ব সক্ষমতার মাধ্যমে নতুন জাহাজ সংগ্রহের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।