ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন বক্তারা। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, কৌশলগত বিনিয়োগ এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তার কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।
রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই ভবনে আয়োজিত ‘তথ্য-প্রযুক্তি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
লুৎফে সিদ্দিকী তাঁর বক্তব্যে বর্তমান সরকারের নেওয়া পদক্ষেপসমূহের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, বিদ্যমান নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন নাগরিক সেবা এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম সহজতর করবে। তিনি আরও জানান, সঠিক পরিসংখ্যানের অভাবে সুসংগঠিত পরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এবং রপ্তানি পরিসংখ্যানসহ বিভিন্ন অসংগতি নিরসনে বর্তমান সরকার বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন- তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও, বাংলাদেশের আয় মাত্র ২.৫ বিলিয়ন ডলারে সীমাবদ্ধ, এখাতে উচ্চমূল্যের সংযোজনযোগ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারণ প্রয়োজন। তিনি পণ্যের ডিজাইন, অ্যাসেম্বলি, প্যাকেজিং এবং টেস্টিং খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উদীয়মান আইওটি বাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে ইন্টিগ্রেটেড ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের (আইডিএম) উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, তৈরি পোশাক খাতের পর তথ্য-প্রযুক্তি খাত দেশের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোর অন্যতম। তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি এই খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে বিডা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বন্ডস্টেইন টেকনোলজিস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, দেশে বর্তমানে ২৬০০-এর বেশি আইটি কোম্পানি কাজ করছে, যা ৩.৫ লাখের বেশি লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। তিনি আইটি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর বিদেশে অফিস স্থাপনের অনুমোদন প্রদান এবং রপ্তানিতে প্রণোদনা পুনর্বহালের প্রস্তাব করেন। তাঁর মতে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশের জন্য পণ্য মেধাস্বত্ব অধিকারের সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) মোহাম্মদ জাকির হাসান, বেসিস-এর প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স-এর চীফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান এবং ওয়ালটন ডিজি টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লিয়াকত আলী। তাঁরা তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল উৎসাহিত করতে কর প্রণোদনা এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলালিংক-এর তাইমুর রহমান তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিমালা সংস্কারের প্রস্তাব দেন। তিনি টেলিকম অ্যাক্ট-এর সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। ওয়ালটন ডিজি টেক-এর মো. লিয়াকত আলী বলেন, প্রতিযোগিতামূলক নীতির অভাবে দেশে এফডিআই আকর্ষিত হচ্ছে না। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে শুল্ক কাঠামো সংস্কারের মাধ্যমে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের সম্ভাবনা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সেমিনারের আলোচনায় আরও উঠে আসে যে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিকাশ ঘটাতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, দক্ষ জনবলের সংকট, সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের অনুপস্থিতি এবং সহায়ক নীতিমালার অভাবের মতো চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।