বাংলাদেশ ব্যাংক ভারতের আদানি পাওয়ারকে ৭৩২ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের অনুমোদন দিয়েছে কৃষি ব্যাংককে। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ এবং আগামী বছরের অক্টোবর পর্যন্ত আর্থিক গ্যারান্টি দেওয়া হবে এই অর্থের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক আমাদের চাহিদামতো ডলার জোগান দিতে না পারায় আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকেই আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আদানিকে তাদের ওভারডিউ পেমেন্ট পাঠানো শুরু করব।’
বিপিডিবি ও কৃষি ব্যাংক উভয়েই এই অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, যা বাংলাদেশে বর্তমান বিদ্যুৎ সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেডের পূর্ণ সক্ষমতা ১,৪৯৬ মেগাওয়াট হলেও ৯ নভেম্বর তারা মাত্র ১১০ মেগাওয়াট এবং পরদিন ৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে।
বিপিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মূলত সোনালী ব্যাংক আমাদের চাহিদামতো ডলার জোগান দিতে না পারায় আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকেই আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আদানিকে তাদের ওভারডিউ পেমেন্ট পাঠানো শুরু করব। পেমেন্ট ধাপে ধাপে করা হবে। এত বড় পেমেন্ট একবারে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এখন থেকে পেমেন্টের কিস্তি বাড়িয়ে দেওয়া হবে। আদানিকে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর চাহিদামতো ডলার সরবরাহ করার সক্ষমতা থাকতে হবে। আমাদের ডলার পেমেন্ট করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য ডলার ম্যানেজ করতে হয়। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব পেমেন্টগুলো করে ফেলা।’
সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘আমি বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিয়ে দেখেছি, বাজারে এখন ডলারের কোনো সংকট নেই। কেউ টাকা নিয়ে এলেই ডলার দিতে পারছে ব্যাংক। এখন বিপিডিবি তাদের ডলার পেমেন্টের জন্য টাকা দিতে না পারাটা তো আমার সমস্যা নয়।’
বিপিডিবি টাকার সংকটে আছে কি না, জানতে চাইলে মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত টাকার সংকট নতুন নয়, এটা অনেক আগে থেকেই আছে। তবে আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়।’
নাম না প্রকাশের শর্তে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের বকেয়া হিসাবে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে পরিশোধ করতে পারছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ০০০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের বকেয়া রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে বকেয়ার পরিমাণই প্রায় ৪৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা এ খাতে চলতি অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের চেয়েও ৩০ শতাংশ বেশি।
৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘বকেয়া বিলের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া আদানি পাওয়ারকে দ্রুত অর্থ পরিশোধে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।’
কৃষি ব্যাংক বিপিডিবিকে চাহিদামতো ডলার কীভাবে সরবরাহ করবে জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিতে বিনতে আলী সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি কৃষি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে কৃষি ব্যাংক গড়ে ১১০ থেকে ১২০ মিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স পেয়েছে। আদানির পেমেন্ট করতে হলে রেমিট্যান্স সংগ্রহে তাদের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি যেহেতু খুব বেশি হচ্ছে না, সেহেতু রেমিট্যান্স ছাড়া ব্যাংকটির ডলার সংগ্রহের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পথ হলো আন্তঃব্যাংক লেনদেন থেকে ডলার সংগ্রহ করা। ফলে কিছুটা চাপ তৈরি হলেও কৃষি ব্যাংক ভালো পারফর্ম করতে পারবে বলে আমরা আশা করছি।
বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে আদানির। ২০১৫ সালে বিপিডিবির সঙ্গে কোম্পানিটির ২৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষরিত হয়। আদানি পাওয়ার ছাড়াও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করে এসইআইএল, এনটিপিসি লিমিটেড ও পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড।