সংবাদ সংস্থা (BSS – Bangladesh Sangbad Sangstha) এমন একটি সংগঠন, যেখানে বিভিন্ন সংবাদপত্রের জন্য কাজ করা সাংবাদিকরা একত্রিত হয়ে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রকাশে কাজ করেন।
এটি মূলত: সংবাদপত্র, টিভি, অনলাইন পোর্টালসহ বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। সংস্থাগুলোর মাধ্যমে একাধিক সংবাদমাধ্যম সহজেই নির্ভুল ও দ্রুততম তথ্য পেতে পারে, যা সমাজে তথ্যপ্রবাহের একটি সেতু তৈরি করে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাসস একসময় দেশের প্রধান সংবাদ সংস্থা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। সাংবাদিকতার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং দেশের তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাসসের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আর্থিক সংকট, কর্মহীনতা এবং প্রযুক্তিগত সমস্যার। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন ও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় এ সংস্থাটি কার্যতঃ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
বাসসের ঐতিহ্য ও অতীত গৌরব:
প্রায় পাঁচ দশক আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) দেশের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক গৌরবময় অধ্যায় রচনা করেছিল। দেশের অভ্যন্তরে কিংবা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ নির্ভরযোগ্য ও নিরপেক্ষভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করে এটি একসময় দেশের সংবাদ মাধ্যমের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্য বাসস ছিল তথ্যপ্রবাহের অপরিহার্য উৎস।
তবে কালের বিবর্তন এবং গণমাধ্যমের দ্রুত পরিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে না পারায় বাসস এখন অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির অনুপস্থিতি, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজ অবস্থান ধরে রাখতে না পারা এবং আয়ের সীমাবদ্ধতা- এই সবকিছু মিলিয়ে বাসস আজ কার্যত তার পুরনো গৌরব হারানোর পথে। মিডিয়া শিল্পে ডিজিটালাইজেশনের ঢেউ এলেও বাসস সেই গতিতে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেনি। সংবাদ জগতে নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাসসের দায়িত্বপালন কার্যতঃ দুর্বল হয়ে পড়েছে। অথচ আধুনিক সময়ে গণমাধ্যমকে যদি সত্যিই কার্যকর ও প্রাসঙ্গিক রাখতে হয়। তবে এই সংস্থাটিকে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও আর্থিক সহায়তায় আরো বেশি শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
আয়ের সংকট এবং বাজেটের সীমাবদ্ধতা:-
বাসসের আর্থিক অবস্থা ক্রমেই সংকটে পড়ছে। সরকারের বাজেট নির্ভর হলেও বর্তমান বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত। এদিকে, বেসরকারি সংবাদ সংস্থাগুলো দ্রুতগতির ইন্টারনেট, আধুনিক সফটওয়্যার ও অটোমেশনের সহায়তায় অনেক বেশি আধুনিক এবং প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে পৌঁছে গেছে। বাসস সেই তুলনায় এখনও পুরনো পদ্ধতিতেই পরিচালিত হচ্ছে। অপ্রতুল বাজেটের কারণে নতুন প্রকল্পগুলো থমকে গেছে, পাশাপাশি কর্মীদের বেতনভাতা এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রেও ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে সংস্থার অভ্যন্তরে আস্থাহীনতা এবং হতাশা তৈরি হয়েছে। কর্মীরা সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। কারণ পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও আধুনিকীকরণ ছাড়া এই জাতীয় সংবাদ সংস্থার সঠিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বাসসের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দরকার আধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ এবং আয়ের উৎস তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মহীনতা এবং জনবল সংকট:–
বাসসের অন্যতম বড় সমস্যা হলো পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান ও দক্ষ জনবলের অভাব। অন্যান্য সংবাদ সংস্থার তুলনায় বাসসের কর্মীরা তুলনামূলক কম সুবিধা পান, পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগও সীমিত। নতুন কর্মী নিয়োগের অভাব এবং পুরনো কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় কর্মীদের দক্ষতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে সংস্থার অভ্যন্তরে উদ্যম ও কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এছাড়াও, পুরনো কাঠামো এবং সনাতনী নিয়ম-কানুনের কারণে বাসস কার্যতঃ অচল অবস্থায় পৌঁছেছে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ কাঠামোকে আধুনিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা না গেলে কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ধরে রাখা কঠিন। বাসসের কার্যকর ভূমিকা ফিরিয়ে আনতে হলে আধুনিক নিয়োগ প্রক্রিয়া, কর্মীদের উন্নয়ন এবং কাঠামোগত সংস্কারের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া জরুরি।
আধুনিক প্রযুক্তির অভাব এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ:–
বর্তমান ডিজিটাল সময়ে গণমাধ্যম শিল্পে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই নতুন বেসরকারি টিভি চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাজারে প্রবেশ করছে, যারা দ্রুততম সময়ে সর্বশেষ সংবাদ সরবরাহের মাধ্যমে দর্শক ও পাঠকদের মন জয় করছে।
কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদন একটি নতুন ধারণা ও উদ্ভাবন:
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংকটের প্রেক্ষাপটে অক্সিজেন উৎপাদন এখন একটি অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, অক্সিজেন সংকট কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
বিশেষতঃ আমাদের মতো দেশগুলোতে যেখানে উন্নত প্রযুক্তি ও অর্থায়নের অভাব প্রকট। এই প্রেক্ষাপটে কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের নতুন ধারণা ও উদ্ভাবন আমাদের জন্য একটি আশার আলো নিয়ে এসেছে। উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহারে খরচ কমিয়ে অক্সিজেন উৎপাদন সম্ভব হলে শুধু জীবন রক্ষা নয় বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এটি এক বিরাট সাফল্য হিসেবে পরিগণিত হবে।
অক্সিজেন উৎপাদনের বর্তমান পদ্ধতি:-
বর্তমানে অক্সিজেন উৎপাদনের প্রধান পদ্ধতি হিসেবে এয়ার সেপারেশন ইউনিট (ASU) এবং লিকুইফাইড অক্সিজেন উল্লেখযোগ্য। ASU একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি, যা বায়ু থেকে অক্সিজেন আলাদা করে। তবে, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য এটি একটি সীমাবদ্ধতা। অন্যদিকে, লিকুইফাইড অক্সিজেন উৎপাদনের প্রক্রিয়া জটিল এবং ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় না। এই অবস্থায় কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের নতুন উপায় উদ্ভাবন করা অত্যন্ত জরুরি।
নতুন উদ্ভাবন ও ধারণা:-
অক্সিজেন উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তিগুলোর উদ্ভাবন আমাদের সম্ভাবনা খুলে দিয়েছে। ন্যানোপোর্টেবল অক্সিজেন জেনারেটর হল একটি উদাহরণ। এটি ছোট আকারের, শক্তি সঞ্চয়কারী এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, যা গ্রামীণ এলাকায় সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই যন্ত্রগুলি বাতাস থেকে অক্সিজেন বের করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
মাইক্রোবায়াল প্রযুক্তি আরেকটি নতুন উদ্ভাবন। যেখানে কিছু ব্যাকটেরিয়া, যেমন: Cyanobacteria, ফটোসিন্থেসিসের মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপন্ন করে। এই প্রযুক্তি পরিবেশের জন্য লাভজনক, কারণ এটি বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড কমাতে সহায়তা করে এবং অক্সিজেনের যোগান বাড়ায়।
অন্যদিকে, কৃত্রিম বায়োসিন্থেসিস হল একটি নতুন ও উদ্ভাবনী পদ্ধতি। যা সূর্যরশ্মি, পানি এবং CO2 ব্যবহার করে অক্সিজেন উৎপন্ন করে। এটি পরিবেশবান্ধব এবং খরচেও সাশ্রয়ী। এছাড়াও, গবেষকরা জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত অণুজীব তৈরি করছেন, যা অক্সিজেন উৎপাদনে দক্ষতা বাড়াতে সক্ষম।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা:-
নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ- নতুন প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং গবেষণা করতে হবে। সেই সঙ্গে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও অক্সিজেন উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তির সম্ভাবনা অসীম। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই প্রযুক্তি কৃষি, শিল্প এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সরকারি উদ্যোগ ও সহযোগিতা:-
বাংলাদেশ সরকারের এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উচিত একত্রিত হয়ে অক্সিজেন উৎপাদনের নতুন প্রযুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা। সরকারি এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় গবেষণার মান উন্নত করা এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব। এতে করে আমরা সহজে সাশ্রয়ী মূল্যে অক্সিজেন উৎপাদনের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারব।
অক্সিজেন উৎপাদনের খরচ কমানোর জন্য নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনগুলোকে সমর্থন করা অপরিহার্য। যদি আমরা সফলভাবে এসব প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে তা দেশের অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সুযোগ, যেখানে কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদন করে একটি স্বাস্থ্যকর এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব। আশা করা যায়, বাংলাদেশ অক্সিজেন উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি সফল মডেল হবে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবে। এভাবে, নতুন প্রযুক্তি ও ধারণার মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপাদনকে সাশ্রয়ী ও কার্যকর করে তুলতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।