যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক রেটিং এজেন্সি মুডিস রেটিংস ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী। তাদের মতে, ভারতীয় অর্থনীতি বর্তমানে একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে এবং বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এটি একটি দৃষ্টান্ত।
চলতি বছরের শেষে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মুডিস। পাশাপাশি ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬ এবং ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে শুরু করে আগামী কয়েক বছরের জন্য মুডিস এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। এর আগে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশটির প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ভারত বর্তমানে অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল দেশ হিসেবে পরিচিত। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে দেশটির অবস্থান আরও দৃঢ় হচ্ছে।
এই প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে মূলত ভোক্তাদের ব্যয় বৃদ্ধির ধারা, বিনিয়োগের উত্থান এবং উৎপাদন খাতে কার্যক্রমের প্রসার। তবে মুডিস সতর্ক করেছে যে মূল্যস্ফীতির চাপ এবং ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই), কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রেখে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছে। চলতি অক্টোবর মাসে রেপো রেট ৬ দশমিক ৫ শতাংশে স্থিতিশীল রাখা হয়েছে। মুডিস এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সংস্থা মনে করছে, আরবিআই আগামী বছরও এই কঠোর নীতি অব্যাহত রাখতে পারে।
মূল্যস্ফীতি ও সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা-
বর্তমানে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২১ শতাংশ, যা বিগত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশেষ করে সবজির মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এই চাপ তৈরি হয়েছে। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবেও মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়ছে।
মুডিস বলেছে, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা আরও বাড়াতে হবে। রিজার্ভ ব্যাংক ইতোমধ্যে কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে, যা আগামী বছরও অব্যাহত থাকবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পূর্বাভাস-
এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে। তাদের ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিবেদন’-এ বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা-
বিশ্ব অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, ভারত তার নিজস্ব গতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিনিয়োগ, উৎপাদন ও ভোক্তা ব্যয়ের উপর ভিত্তি করে দেশটির অর্থনীতি আরও দৃঢ় হচ্ছে। যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বৈশ্বিক অস্থিরতা সামাল দেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তবু ভারতের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী।