দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, তেল, চিনি, খেজুর আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হারাবে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব। নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ। কিন্তু শুল্ক ছাড়ের কোনো প্রভাব নেই বাজারে। দাম কমা তো দূরের কথা উলটো এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। কোনোটা দাম বাড়ার পর স্থিতিশীল রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘুরেফিরে এসব শুল্ক ছাড়ের সুফল ঢুকছে বাজার সিন্ডিকেটের চিরচেনা মাফিয়া চক্রের পকেটে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে বছরে এক কোটি মানুষের মাঝে নিত্যপণ্য সরবরাহ করেছে। এজন্য সংস্থাটিকে ৩ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
টিসিবি এক লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকায় এবং মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৬০ টাকা বিক্রি করছে। পক্ষান্তরে সয়াবিল তেল আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলেও ১৬৭-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হিসাব মতে, আলোচ্য ৭ পণ্যে শুল্ক ছাড় না দিলে সেই অর্থ দিয়ে আরও এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে ৮ মাস পণ্য সরবরাহ করতে পারত টিসিবি। গত ২ মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এনবিআর কীটনাশক, আলু, পেঁয়াজ, চিনি, ডিম, ভোজ্যতেল, চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে।
এনবিআরের তথ্য বলছে-পেঁয়াজ, আলু, চিনি ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ায় এনবিআর প্রায় ১৭শ কোটি টাকা এবং ভোজ্যতেলে আমদানিতে ভ্যাট কমানোয় ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। এর আগে ডিম ও চাল আমদানি না হওয়ায় এই দুই পণ্য আমদানিতে কী পরিমাণ শুল্ক ক্ষতি হবে তা নির্ণয় করতে পারেনি সংস্থাটি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকার পতনের পর নতুন সরকারের কাছে ভোক্তার প্রথম চাওয়া পণ্যের দাম কমানো। সরকার সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছে। সরবরাহ বাড়াতে একাধিক পণ্যের শুল্ক ছাড় দিয়েছে। তদারকিও করা হচ্ছে। তারপরও পণ্যের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। তবে কিছুদিন আগে ডিমের দাম বাড়লেও এখন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এরপরও কিছু পণ্যের দাম এখনও বাড়তি। সেদিকে সরকারের নজর বাড়াতে হবে। পণ্যের দাম কমিয়ে ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে হবে। দরকার হলে অসাধুদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এনবিআরের পরিসংখান বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, অক্টোবরে দুই দফায় চালের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। প্রথম দফায় ২০ অক্টোবর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ৩১ অক্টোবর শুধু ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বহাল রেখে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। সবমিলিয়ে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তখন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এনবিআর বলেছিল, শুল্ক কমানোয় প্রতি কেজি চালের আমদানি ব্যয় ২৫ দশমিক ৪৪ টাকা কমবে। এতে চালের আমদানি ও বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। অথচ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের দাম কমেনি, উলটো এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে।
আলু, পেঁয়াজ, চিনি, ডিম, ভোজ্যতেল, চাল সহ সকল নিত্য-প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা ধরা ছোয়ার বাইরে। সরকারীভাবে নজরদারী বাড়ানোর তাগিদ সাধারণ মানুষের।