দীর্ঘ দুই বছরের বিরতি শেষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ভারত থেকে তিনটি ট্রাকে ১০৫ মেট্রিক টন চালের প্রথম চালান দেশে প্রবেশ করে। বেনাপোল শুল্ক ভবনের কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চালের প্রথম চালানটি আসে ভারতীয় পশ্চিমবঙ্গের সুধারাম আয়াত নিরায়াত প্রাইভেট লিমিটেড থেকে। যশোরের মাহাবুবুল আলম ফুড প্রডাক্ট এই চালানটি আমদানি করেছে। আমদানিকৃত ১০৫ মেট্রিক টন চাল তিনটি ট্রাকে পরিবহন করা হয়। পাশাপাশি আরও দুটি চালান-একটি মাহাবুবুল আলম ফুড প্রডাক্টের ১০৫ মেট্রিক টন এবং অপরটি অর্ক ট্রেডিংয়ের ১০০ মেট্রিক টন-ভারত থেকে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
বন্দর থেকে এই চাল খালাসের কাজ পরিচালনা করছে তিনটি সিএন্ডএফ এজেন্ট-হোসেন এন্ড সন্স, মিলন এন্টারপ্রাইজ এবং আবেদিন এন্টারপ্রাইজ। সিএন্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, আমদানিকৃত প্রতি টন চালের দাম ৪৩০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই দাম প্রতি কেজি ৫২ টাকা পড়েছে। পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে খুচরা বাজারে এই চালের দাম কেজি প্রতি ৫৫ টাকা হতে পারে।
শুল্ককর প্রত্যাহার এবং আমদানির অনুমতি-
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্প্রতি শুল্ককর প্রত্যাহারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় ভারত থেকে ২ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ১ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানি করা হবে। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই চাল আমদানি ও বাজারজাত করতে হবে।
২০২৩ সালের ২০ জুলাই ভারত সরকার চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর আগেই, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি বন্ধ ছিল। সে সময় চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ৬২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। দীর্ঘদিন আমদানি বন্ধ থাকায় বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে চালের সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।
চালের আমদানি পুনরায় শুরু হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এটি সাময়িকভাবে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে। তবে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আমদানিকারকরা পুরো চালের চালান সম্পন্ন করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার মনে করেন, আমদানির এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে আমদানিকারকদের সময়মতো কার্যক্রম শেষ করার সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে এই উদ্যোগের সফলতা।
দুই বছরের দীর্ঘ বিরতির পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানির শুরুতে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে বাস্তবায়নের চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য বাজার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে।