দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হতে পারে আসন্ন বাজেটে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, ২ জুন ঘোষিতব্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এই প্রস্তাব পেশ করা হতে পারে যাতে মোবাইল উৎপাদনে ভ্যাটের হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
বর্তমানে মোবাইল ফোন উৎপাদনে দুটি ভিন্ন ভ্যাট হার চালু আছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান কমপক্ষে দুটি কম্পোনেন্ট বা যন্ত্রাংশ নিজে তৈরি করে এবং বাকি অংশ আমদানি করে সংযোজন করে তাহলে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। অন্যদিকে যদি সব উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করে কেবল সংযোজনের কাজ করে সেক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এনবিআর এখন প্রথম ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তা ১০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে।
এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, প্রযুক্তি খাতের পণ্যসমূহ এখন অনেক সুলভ হয়েছে ফলে ভ্যাট বাড়লেও মোবাইল ফোনের দামের ওপর তার তেমন প্রভাব পড়বে না বলেই তারা মনে করছেন।
বর্তমানে দেশে ১৭টির মতো প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজন করে। দেশে স্মার্টফোনের চাহিদাও ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৭০ শতাংশ পরিবার এখন স্মার্টফোন ব্যবহার করে। আর বৈশ্বিক সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ)–এর ‘দ্য স্টেট অব মোবাইল ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শহরে ৪১ শতাংশ এবং গ্রামে ২৬ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।
তবে মোবাইল খাত সংশ্লিষ্টরা ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাবে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক জানিয়েছেন, স্মার্টফোন বাজারের ৫০ শতাংশের বেশি এখনো অবৈধ পণ্যে পূর্ণ। এ অবস্থায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফোনে ভ্যাট বাড়ানো হলে বৈধ উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং অবৈধ বাজার আরও শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, ভ্যাট বাড়ানো হলে প্রতিটি মোবাইল ফোনের দাম গড়ে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
তাঁর মতে, ভ্যাট বাড়িয়ে সরকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় নাও পেতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত অবৈধ পথে আসা স্মার্টফোনের প্রবাহ বন্ধ না করা যায়। পাশাপাশি দেশীয় মোবাইল নির্মাতাদের জন্য যন্ত্রাংশ আমদানি ও উৎপাদনে কর হ্রাসের দাবি জানান তিনি, যাতে এই শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে এবং দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের উচিত মোবাইল ফোন শিল্পে নীতিগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং অবৈধ পণ্যের প্রবেশ ঠেকিয়ে বৈধ উৎপাদনকারীদের উৎসাহিত করা। তা না হলে ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব শুধু রাজস্বেই নয় বরং গোটা খাতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।