জার্মানির আইএনজি ব্যাংক বেক্সিমকোকে দেওয়া ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর ইসিএ টার্ম লোন আদায়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-কে (বিডা) চিঠি দিয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারিখাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো লিমিটেড জার্মানিতেও ঋণখেলাপি হয়েছে।
এই ঘটনায় ঋণদাতা জার্মান ব্যাংককে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
জার্মানির আইএনজি ব্যাংক বেক্সিমকোকে দেওয়া ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর ইসিএ টার্ম লোন আদায়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-কে (বিডা) চিঠি দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গত ২১ মে ফরেন লোন/সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট স্ক্রুটিনি কমিটি-এর (বৈদেশিক ঋণ ও সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট যাচাই কমিটি) সভায় আলোচনা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, পাওনা আদায়ে বেক্সিমকো লিমিটেড এর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে জার্মান লেন্ডারকে পরামর্শ দেবে কমিটি। বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, “ঋণগ্রহীতা বেক্সিমকো ঋণ পরিশোধে অগ্রসর না হলে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর আওতায় ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা নিতে ঋণদাতাকে অনুরোধ জানাবে বিডা”।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, বেক্সিমকো জার্মানির আইএনজি ব্যাংক থেকে ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর ইসিএ টার্ম লোন নিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ঋণের আসল কিংবা সিকিউরিটি ইন্টারেস্ট পরিশোধ করেনি। এতে আইএনজি ব্যাংক বিডাকে চিঠি দিয়ে জানতে চায়, বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তার ফলাফল কী। এই চিঠিটি গভর্নরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় উপস্থাপন করে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো গ্রুপের মোট ঋণ ছিল প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা, যার অর্ধেক তখন খেলাপি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত ছিল। এরপর থেকে গ্রুপটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়েছে।
এদিকে চেক প্রজাতন্ত্রের চেকোস্লোভেন্সকা ওবখোদিনি বানকা (চেকোস্লোভাকিয়ার বাণিজ্যিক ব্যাংক) থেকে নেওয়া ৪ দশমিক ১০ মিলিয়ন ইউরোর ইসিএ কাভার্ড বায়ার্স ক্রেডিট পরিশোধে ‘সহযোগিতা না করার’ অভিযোগে দেশবন্ধু গ্রুপের বিরুদ্ধে একটি চিঠি পাঠিয়েছে দিল্লিতে অবস্থিত চেক প্রজাতন্ত্রের দূতাবাস।
এই চিঠি নিয়েও স্ক্রুটিনি কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, দেশবন্ধু গ্রুপের ঋণখেলাপি পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানে চেক প্রজাতন্ত্রের এক্সপোর্ট গ্যারান্টি অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (ইজিএপ) এবং ঋণগ্রহীতার মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিডা।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার তার ছেলে ও ভাতিজার নামে থাকা সম্পত্তি জব্দ করেছে। অন্যদিকে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেডের ১৪টি কারখানা ৯ মার্চ থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানার শ্রমিকদের পাওনা টাকা সরকার পরিশোধ করেছে। জনতা ব্যাংক থেকে কোম্পানিটি প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে।
গতকাল বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরীর সঙ্গে জার্মানিতে কোম্পানির খেলাপি ঋণ নিয়ে কথা বলার জন্য ফোন ও এসএমএসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
অন্যদিকে চেক প্রজাতন্ত্রে ৪০ লাখ ইউরো খেলাপি ঋণ নিয়ে কথা বলার জন্য দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার সঙ্গেও হোয়াটসঅ্যাপ কল ও এসএমএস-এ যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনিও কোনো সাড়া দেননি।