বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার এক ধাপ এগিয়ে গেছে। প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে প্রধান ও সহায়ক ট্রান্সফরমারগুলোর কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছে। ফলে কেন্দ্রটি এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির দিকে এগোচ্ছে।
শনিবার দুপুরে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রূপপুর প্রকল্পে শিগগিরই চালানো হবে ‘হট মিডিয়া টেস্ট’সহ বেশ কয়েকটি নিরাপত্তামূলক পরীক্ষা। এ সময় বাষ্প নির্গমনের কারণে আশপাশের এলাকায় কিছু শব্দ শোনা যেতে পারে। তবে তা পূর্বপরিকল্পিত এবং নিরাপদ। এতে স্থানীয়দের জন্য কোনো ঝুঁকি থাকবে না।
রোসাটম জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সকল নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাহিদা পূরণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য। প্রকল্পের কমিশন হওয়া প্রধান ট্রান্সফরমারগুলো টার্বাইন জেনারেটরে উৎপাদিত ২৪ কেভি বিদ্যুৎকে ৪০০ কেভিতে রূপান্তর করবে। এই রূপান্তর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অপরিহার্য। প্রতিটি ট্রান্সফরমারের ক্ষমতা ১ হাজার ৫৯৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত, যা কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা—প্রতিটি ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট—অতিক্রম করে। এর ফলে বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ট্রান্সফরমারগুলোর প্রতিটি ফেজের ওজন প্রায় ৪০০ টন। সংযোগ সম্পন্ন করতে ব্যবহার হয়েছে ১৫০ কিলোমিটারের বেশি বৈদ্যুতিক কেবল।

এ ছাড়া ইউনিটটির অভ্যন্তরীণ সিস্টেমে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যবহৃত সহায়ক ট্রান্সফরমারগুলোর কমিশনিংও শেষ হয়েছে। এই ট্রান্সফরমারগুলো দ্বৈত মোডে কাজ করতে সক্ষম—জাতীয় গ্রিড ও জেনারেটর উভয় উৎস থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারে। আগে যেখানে স্ট্যান্ডবাই ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হতো, এখন এই উন্নত ট্রান্সফরমারগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।
রূপপুর প্রকল্পে রাশিয়ার অ্যাটমস্ত্রয়এক্সপোর্টের বাংলাদেশ প্রকল্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেক্সি ডেইরি বলেন, “এটি আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। কঠিন লজিস্টিক ও জলবায়ু পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমরা কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। ইউনিটের নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য চালুর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
উল্লেখ্য, রূপপুর প্রকল্পে রাশিয়ার সহায়তায় দুটি ভিভিইআর-১২০০ চুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। প্রকল্পটি পরিচালনায় রোসাটমের প্রকৌশল শাখা দায়িত্ব পালন করছে। কেন্দ্রটির মোট উৎপাদনক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।