যদিও মার্কেট রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে, তবুও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্রুত পরিবর্তনশীল ও অনিশ্চিত নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক। বাজারে যে উত্থান দেখা যাচ্ছে, সেটিকে তারা ভঙ্গুর মনে করছেন। শুক্রবার এস অ্যান্ড পি ৫০০ এবং নাসডাক কম্পোজিট সূচক নতুন সর্বোচ্চতে পৌঁছেছে। কিন্তু ট্রেডার ও বিনিয়োগকারীরা আগামী দিনের পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক।
এপ্রিল মাসে ট্রাম্পের বড় মূল্যের শুল্ক ঘোষণা বিশ্ববাজারে ঝড় তুলেছিল। এর ফলে এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ফ্রেব্রুয়ারি মাসের রেকর্ড থেকে ১৯ শতাংশ কমে শেয়ারবাজারের মন্দার কাগজে চলে এসেছিল। এরপর গত কয়েক সপ্তাহে মার্কেট কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘর্ষ বন্ধ হওয়ার পরে কাঁচা তেলের দাম কমে যাওয়ায় বাজারে শিথিলতা দেখা দেয়। ট্রাম্পের কিছু শুল্ক পরিকল্পনা থেকে সরে আসার কথাও বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি দিয়েছে।
জে পি মর্গান চেইজের সাময়িক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাজার এখন “চরম নীতি অনিশ্চয়তার” মধ্যে আছে। বি. রাইলি ওয়েলথের মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট আর্ট হোগান বলেন, “কারও কাছে সাপ্তাহিক ঝুঁকি নেওয়ার মনোভাব নেই। বাজার যখন আশ্বাস দেয়, তখনও একটি অপ্রত্যাশিত নীতিমালা এক্ষুণি পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে।”
ব্যাংক অফ আমেরিকার জোসেফ কুইনলান জানান, গত নভেম্বরে ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের পর বাজার ৬ শতাংশ উঠে গিয়েছিল। করছাড়, নিয়ম শিথিলতা ও কর্পোরেট চুক্তি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আশা বাড়েছিল। কিন্তু এরপর শুল্ক যুদ্ধে বাজার অস্থির হয়ে পড়ে। তবুও তিনি আশাবাদী যে, নতুন বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন বাজার খুলে দেবে। তবে এখনও নীতি পরিবর্তনের কারণে বাজারে ওঠানামা থাকবে।
বাজারের অস্থিরতা কমেছে। এপ্রিল মাসে ভোলাটিলিটি সূচক (VIX) ৫২.৩ পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল, এখন তা ১৬.৩-এ নেমে এসেছে। তবে মার্কেট বিশেষজ্ঞরা সতর্ক, বাজার এখনো “অস্থির” এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো কোনো খবর বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। ইনস্টিটিউশনাল বিনিয়োগকারীরা এখনো উত্সাহ দেখাচ্ছেন না। অনেকেই বাজারে লম্বা অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। মার্কেট গভীরতা, অর্থাৎ সম্ভাব্য অর্ডারের সংখ্যা ও পরিমাণ, বিগত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
চার্লস শ্বাবের লিজ অ্যান সন্ডার্স আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বাজার “আরেকটি কম্প্ল্যাসেন্সি” পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, যা পরবর্তী পতনের কারণ হতে পারে। পোটোম্যাক রিভার ক্যাপিটালের চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার মার্ক স্পিন্ডেল ট্রাম্পের নীতির স্থিতিশীলতার অভাবকে “স্ন্যাপচ্যাট প্রেসিডেন্সি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলছেন, ট্রাম্প দিনের বাজার ব্যবসায়ীর মতো আচরণ করছেন, যিনি এক মুহূর্তে নীতি কঠোর করছেন, পরের মুহূর্তে নরম হচ্ছেন।
তবে ট্রেডাররা এই নীতির পরিবর্তনকে ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখছেন। ইন্টারেকটিভ ব্রোকার্সের স্টিভ সোসনিক বলেন, “বর্তমানে বাজার এসব ঝুঁকি উপেক্ষা করে প্রশাসনকে ‘বাজার বান্ধব’ হিসেবে দেখছে।”