মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনায় চাপে পড়েছে বিশ্ববাজার। বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ভাটার টান পড়েছে। মার্কিন মুদ্রানীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে ডলারের মূল্যে।
ইউরোর বিপরীতে ডলারের মান নেমে গেছে প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে ফেডের বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সরিয়ে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সম্ভাবনার খবরই বাজারে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেডের উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বার্তা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড়সড় ধাক্কা দিচ্ছে। এতে শুধু ফেডের বিশ্বাসযোগ্যতা নয় বরং ভবিষ্যতে সুদের হার কোন দিকে যাবে—তা নিয়েও স্পষ্টতা হারাচ্ছে বাজার।
মোনেক্স ইউরোপের ম্যাক্রো গবেষণা প্রধান নিক রিস বলেন, “এটি কেবল ফেডের স্বাধীনতার বিষয় নয় বরং মার্কিন সুদের হারের ভবিষ্যৎ প্রবণতা নিয়েও বড় অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। ফলে ডলারের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।”
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ পারস্পরিক শুল্ক চুক্তির মেয়াদ ৯ জুলাই শেষ হচ্ছে—এটি ডলার বাজারে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এর আগের দিন, ট্রাম্প ও জেরোম পাওয়েলের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ প্রকাশ পায়। পাওয়েল বলেন, প্রেসিডেন্টের শুল্কনীতি দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়াতে পারে। তাই সুদের হার কমানোয় ফেডকে আরও সতর্ক হতে হবে। জবাবে ট্রাম্প তাকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে উল্লেখ করেন এবং জানান, ফেড চেয়ারম্যান পদে তার হাতে বিকল্প হিসেবে তিন-চারজন আছেন।
এসব ঘটনার প্রভাবে বাজার এখন ধরে নিচ্ছে, জুলাই মাসেই সুদের হার কমাতে পারে ফেড। এক সপ্তাহ আগে এ সম্ভাবনা ছিল মাত্র ১২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে। বছরের শেষ নাগাদ মোট ৬৪ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদ কমতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। আগের সপ্তাহে এই হিসাব ছিল ৪৬ পয়েন্ট।
এই পরিস্থিতিতে ইউরো শক্তিশালী হয়েছে। বর্তমানে ইউরোর মান দাঁড়িয়েছে ১.১৭২৯ ডলার, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। পাউন্ডের মান বেড়ে হয়েছে ১.৩৭৫৩ ডলার, যা একই বছরের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। ডলারের বিপরীতে সুইস ফ্রাঙ্কের দরও এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তবে জাপানি ইয়েনের মান কিছুটা পতনের পর আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ইয়েনের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন তাকিয়ে আছেন ব্যাংক অব জাপানের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে। জানুয়ারিতে সংস্থাটি স্বল্পমেয়াদী সুদের হার ০.৫ শতাংশে উন্নীত করেছিল। এবার ধারণা করা হচ্ছে, আরও বাড়তে পারে।
নিক রিসের মতে, “ব্যাংক অব জাপান ধীরে এগোবে, তবে এই ধীর গতিও ইয়েনের মান ধরে রাখতে সাহায্য করবে।”
সব মিলিয়ে, ফেডের ওপর রাজনৈতিক চাপ ও বৈশ্বিক বাণিজ্য অনিশ্চয়তা মার্কিন ডলারকে দুর্বল করে ফেলেছে। সেই সুযোগে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে ইউরো, পাউন্ড, ইয়েন ও ফ্রাঙ্ক।