বাংলাদেশ সরকার জুন মাসে ভারতের আদানি পাওয়ারকে ৩৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তির আওতায় এই অর্থ পরিশোধের ফলে বকেয়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুক্তি সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র। খবর দিয়েছে ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, ২৭ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ৩৮৪ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। জুন মাসে মোট পরিশোধযোগ্য অর্থ ছিল ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার। এই অর্থ পরিশোধের ফলে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ‘গ্রহণযোগ্য’ বা স্বীকৃত পাওনা মেটানো হয়েছে। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মাসের বাকি সময়ের মধ্যে বাকি অর্থও পরিশোধ করা হলে আদানির দাবিকৃত মোট বকেয়া নেমে আসবে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারে। যদিও আদানি গ্রুপের দাবি অনুযায়ী এখনো বাংলাদেশের দেনা উল্লেখযোগ্য অঙ্কে রয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় ২০১৭ সালের এই বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিত অর্থ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছিল বাংলাদেশ। পরিস্থিতির জেরে ২০২৪ সালের শেষ দিকে আদানি তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। তবে চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ বকেয়া পরিশোধ শুরু করলে আবারও পূর্ণ সরবরাহ চালু হয়।
সর্বশেষ পরিশোধসহ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। মোট বিল করা হয়েছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। সূত্রমতে, নিরবচ্ছিন্ন পরিশোধ অব্যাহত থাকলে জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে বিলম্ব ফি বাবদ প্রযোজ্য ২০ মিলিয়ন ডলার মওকুফ করতে রাজি হয়েছে আদানি।
এদিকে, কয়লার মূল্য নির্ধারণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সংক্রান্ত কিছু হিসাব নিয়ে এখনো বাংলাদেশ ও আদানি গ্রুপের মধ্যে আলোচনা চলছে। এই কারণেই ‘দাবিকৃত’ ও ‘গ্রহণযোগ্য’ পাওনার মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়। এই বিষয়ে আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র অর্থ পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ‘দাবিকৃত’ ও ‘সমঝোতাকৃত’ পাওনার বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তার ভাষায়, এসব বিষয় এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের এই চুক্তি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয় ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর। এরপর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি পাওয়ারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত শতভাগ বিদ্যুৎ ২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশে সরবরাহের কথা। ২০২৪ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। তবে মার্চে বকেয়া পরিশোধের পর প্রায় ১,৬০০ মেগাওয়াট সম্পূর্ণ সরবরাহ পুনরায় শুরু হয়