তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক বাণিজ্য আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তাইওয়ানের অর্থনীতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিনিধিরা গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসেন। এই আলোচনা যুক্তরাষ্ট্র-তাইওয়ান ইনিশিয়েটিভ অন টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ট্রেড চুক্তির অংশ।
বৈঠকে বাণিজ্য বাধা কমানো, বিনিয়োগ বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। তাইওয়ানের প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। উভয় পক্ষই পারস্পরিক সুবিধার জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে চুক্তির কিছু জটিল বিষয় এখনো সমাধানের অপেক্ষায়।
তাইওয়ানের এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনে শেষ হওয়া আলোচনার ফলস্বরূপ “গঠনমূলক অগ্রগতি” এসেছে। আলোচনার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক প্রতিহত বা হ্রাস করা। তাইওয়ান, যেটি বিশ্বে আধুনিকতম সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহকারী, ৪% সুদভিত্তিক আমদানির শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশা করছে। মার্চের রিটার্ন শুল্ক স্থগিত ছিল ৯০ দিন, সেই সময়সীমার মধ্যেই দুটি দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম রাউন্ড হয়েছিল ওয়াশিংটনে, দ্বিতীয় রাউন্ডও একই স্থানে গত কয়েকদিনে অনুষ্ঠিত হয়।
এই আলোচনা মূলত তিনটি বিষয়ে কেন্দ্রীভূত – আমদানির শুল্ক, অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উন্নয়নের পথ। তাইওয়ান শুল্ক নিয়ে যাচ্ছিল ৩২% “রিকিপ্রোক্যাল” ট্যারিফ আরোপের পথে; তবে ট্রাম্প প্রশাসণ তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছিল। আলোচনায় অংশ নিয়ে, তাইওয়ান শুল্ক শুন্য করার প্রস্তাব দিয়েছিল এবং আমদানি, বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। পাশাপাশি, তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিরক্ষা সামগ্রী, এলএনজি ও কৃষি পণ্য আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছে, যা তাদের ৭৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে।
তাইওয়ানের অর্থনীতি মন্ত্রী বলেন, “এই আলোচনা আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আমরা দুই দেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করছি।” যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে তারা আগ্রহী।
এই চুক্তি তাইওয়ানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি দেশটির বৈশ্বিক বাণিজ্য নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করবে। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে তাইওয়ানের ভূমিকা বিবেচনায় এই অগ্রগতি তাৎপর্যপূর্ণ। তবে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে আরও আলোচনার প্রয়োজন। আগামী মাসগুলোতে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আবারও বৈঠকে বসবেন। তারা অবশিষ্ট বিষয়গুলো সমাধানে কাজ করবেন। তাইওয়ান আশাবাদী যে, এই চুক্তি উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।