বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের ‘তারল্য সংকটে’ ভুগছিল। প্রচলিত পদ্ধতির ব্যাংকগুলো যেখানে সহজেই পরস্পরের কাছ থেকে সুদভিত্তিক ঋণ নিয়ে সাময়িক সংকট সামলে নেয়, সেখানে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো সুদের কারণে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই পরিস্থিতির বদল আনতেই বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে আসছে দুটি নতুন আর্থিক উপকরণ—ইসলামি মুদ্রা বাজার ও ইসলামি মূলধন বাজার।
রোববার (২৯ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নতুন এই দুটি বাজার চালু হলে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো একে অপরের কাছ থেকে শরিয়াহ সম্মত পদ্ধতিতে তারল্য সংগ্রহ করতে পারবে। বর্তমানে ইসলামি ব্যাংকগুলো কল মানি মার্কেট বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদভিত্তিক ঋণ সুবিধা ব্যবহার করতে পারে না। ফলে জরুরি তারল্য সংকটে পড়লে তাদের সামনে খুব কম বিকল্প থাকে।
নতুন বাজার চালুর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকগুলো শরিয়াহ নীতিমালা মেনে ‘বিনিয়োগ-ভিত্তিক’ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দ্রুত অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। এতে শুধু ব্যাংক খাতই নয়, ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থার অন্যান্য খাত যেমন—ইসলামি পুঁজিবাজার, তাকাফুল (ইসলামি বিমা), ও ইসলামি ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাও আরও কার্যকর হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং খাতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর অবদান ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে মোট ব্যাংক আমানতের ২৪ শতাংশের বেশি এবং ব্যাংক বিনিয়োগের ২৮ শতাংশের বেশি রয়েছে ইসলামী ব্যাংকগুলোর হাতে। তবে এত অগ্রগতির পরও গ্রামীণ এলাকায় তাদের শাখা বিস্তারের হার আশানুরূপ নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামি ব্যাংকিং সেবার চাহিদা শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। ফলে গ্রামীণ এলাকায় শাখা সম্প্রসারণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকগুলোকে এইসব এলাকায় কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও মহিলাদের উদ্যোগে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পরামর্শ দিয়েছে।
ইতোমধ্যে চালু হওয়া ইসলামি বন্ড, অর্থাৎ সুকুক বন্ড নিয়েও আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতেও।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, ইসলামি ব্যাংকিং কাঠামোর পরিধি যদি সঠিকভাবে প্রসারিত করা যায়, তবে তা হতে পারে একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল আর্থিক বিকল্পব্যবস্থা। শুধু ধর্মীয় নীতির কারণে নয়, বরং উন্নয়নবান্ধব ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবেই এর গুরুত্ব বাড়ছে।