মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার কংগ্রেসে তার বহুল আলোচিত কর ও ব্যয় বিলের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রিপাবলিকানরা আশা করছেন, সামান্য ব্যবধানে হলেও বিলটি হাউসে পাস হবে। এটি ট্রাম্পের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিলটি রিপাবলিকানদের বহুদিনের প্রত্যাশিত একটি পদক্ষেপ। মঙ্গলবার সিনেটে এটি মাত্র একটি টাইব্রেকিং ভোটে পাস হয়। ভোটের আগে টানা ২৭ ঘণ্টা ধরে বিতর্ক চলে এবং দলে বিভক্ত মতভেদ প্রকাশ পায়। এই প্রস্তাবিত আইন একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ আরও বাড়াবে, অন্যদিকে ইতিহাসে অন্যতম বড় সামাজিক সুরক্ষা ছাঁটাইয়ের পথে এগোবে। বিলটি মূলত ২০২৫ সালের মে মাসে প্রতিনিধি পরিষদে অনুমোদিত হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত ভাষায় সম্মতির জন্য এটি আবার হাউসে পাঠানো হয়, যেখানে এখনো ভোট নিশ্চিত নয়।
হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেন, “এই বিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এজেন্ডার প্রতিফলন। আমরা এটিকে আইনে রূপান্তর করছি। আমরা কাজ শেষ করতে প্রস্তুত।” ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের এই প্যাকেজে ট্রাম্পের প্রচার-প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো, অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনে তহবিল, এবং কর রেয়াত ১০ বছরের জন্য বাড়ানোর বিষয় রয়েছে। তবে এতে আগামী এক দশকে বাজেট ঘাটতিতে অতিরিক্ত ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ হবে এবং মেডিকেইড স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে ৬০-এর দশকের পর সবচেয়ে বড় ছাঁটাই হবে।
অর্থনৈতিক রক্ষণশীলদের মতে, ব্যয় হ্রাসের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বিলটি তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ভাষায়, এটি শত শত বিলিয়ন ডলার কমতির মধ্যে রয়েছে। হাউসে বিলটি পাস করাতে জনসনকে জটিল সংখ্যাগত সমীকরণ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ২০ জনের বেশি রিপাবলিকান সদস্যের মধ্যে মাত্র তিনজন ভিন্নমত দিলেই বিলটি ব্যর্থ হতে পারে। অ্যারিজোনার রক্ষণশীল সদস্য অ্যান্ডি বিগস বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে এই বিল বর্তমান অবস্থায় পাস হবে। এতে কিছু আশ্চর্যজনক খারাপ সিদ্ধান্ত রয়েছে।”
বুধবার সকালে কংগ্রেস অধিবেশন শুরুর পরই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও ট্রাম্পের ঘোষিত ৪ জুলাইয়ের সময়সীমার আগে এখনো দুই দিনের অতিরিক্ত সময় রয়েছে। ৮৮৭ পৃষ্ঠার বিলটির হাউসে পাস হওয়া সংস্করণ অপেক্ষাকৃত নরম ছিল, কিন্তু সিনেটে কিছু সংশোধনের মাধ্যমে একে আরও ডানপন্থী করে তোলা হয়। ঋণ বৃদ্ধির কারণে একজন কনজারভেটিভ সিনেটর বিরত থাকেন, এবং দুইজন মধ্যপন্থী সদস্য স্বাস্থ্য খাতের এক ট্রিলিয়ন ডলারের ছাঁটাই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বিলটি কার্যকর হলে প্রায় ১.৭ কোটি আমেরিকান স্বাস্থ্য বীমা হারাতে পারেন এবং বহু হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফেডারেল খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির পরিবর্তনের ফলে কয়েক মিলিয়ন দরিদ্র নাগরিক খাদ্য স্ট্যাম্প সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
হাউসে ভোট নিশ্চিত করতে ট্রাম্প নিজ প্রভাব কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি এর আগেও এমন পরিস্থিতিতে নিজ দলের সদস্যদের রাজি করিয়েছেন। মঙ্গলবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তিনি রিপাবলিকানদের উদ্দেশে লেখেন, “কাজটা শেষ করো।” বিলটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ট্রাম্পের জন্য এটি হবে একটি বড় বিজয়। তবে তিনি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে শাসন চালিয়ে অনেকবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন। দলের অনেক সদস্যও ওয়েলফেয়ার-নির্ভর ভোটারদের ক্ষুব্ধ করতে চান না, আবার ট্রাম্পের বিরাগভাজনও হতে চান না।
এদিকে হাউসের ডেমোক্র্যাটরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তারা এই বিলের বিরুদ্ধে প্রচার চালাবেন এবং ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাউস পুনর্দখলের চেষ্টা করবেন। তাদের অভিযোগ, এই বিলের মাধ্যমে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিমাণে দরিদ্রদের কাছ থেকে ধনীদের হাতে সম্পদ স্থানান্তর ঘটানো হচ্ছে।
সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিস বলেন, “সিনেটে রিপাবলিকানরা এই জঘন্য বিল পাস করে লজ্জার কাজ করেছে। হাউস রিপাবলিকানরাও ট্রাম্পের চরমপন্থী এজেন্ডার কাছে মাথা নত করে লজ্জা ডেকে আনছে।”