একটানা বেড়ে চলা রপ্তানি আয় জুনে হঠাৎই হোঁচট খেয়েছে। ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকায় মাসের শুরু ও শেষের বেশ কিছু দিন রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এর ফলে জুন মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বছরের অন্য ১১ মাসে রপ্তানি ছিল চাঙা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলারে। সব মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তবে শুধু জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী, মে মাসে যেখানে রপ্তানি আয় ছিল ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার, সেখানে জুনে তা নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়নে। অর্থাৎ এক মাসেই আয় কমেছে প্রায় ১৩৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলার।
রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ ছিল। মাসের শেষে এনবিআরের কর্মবিরতিতে বন্দরের গেটও বন্ধ ছিল। এ অবস্থায় অপেক্ষমাণ কার্গোগুলোতে পণ্য লোড দেওয়া ও গন্তব্যে পাঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। গত ২৬ ও ২৭ জুন এনবিআরের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানি কার্যত থমকে যায়। ফলে বন্দরে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার জমে যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছুটি ও শাটডাউনের এমন যুগলবন্দী আগে দেখা যায়নি।
পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘জুনে আমার কারখানার রপ্তানি কমেছে। ছুটি না থাকলে এই মাসে মে মাসকেও ছাড়িয়ে যেত।’ তবে তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘চলতি ধারা কয়েক মাস চললেও এরপর বড় ধাক্কা আসতে পারে। কারণ, এখন লোকসানে অর্ডার নিতে হচ্ছে। কারখানা চালু রাখতে অনেকেই কমদামে কাজ নিচ্ছেন। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, আরও বন্ধ হবে।’
রপ্তানির সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। কৃষিপণ্যেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি—২ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। তবে কাচজাত পণ্যের রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমেছে—নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ৩৮ শতাংশ। পাটজাত পণ্যেও আয় কমেছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। সব মিলিয়ে বছরের শেষে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলারে, যা আগের অর্থবছরের ৪ হাজার ৪৪৬ কোটি ৯৭ লাখ ডলার থেকে বেশ কিছুটা বেশি।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে রপ্তানি ধারা ভালো থাকবে। তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ, ট্রাম্পের শুল্কনীতি প্রভাব ফেলতে পারে।’
বাংলাদেশ অ্যাপারেলস এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘ইউরোপের বাজারে খুব একটা পরিবর্তন আসবে না। ভালো অর্ডার আসছে। তাই ধারাবাহিক ইতিবাচক প্রবণতা আশা করা যায়।’