পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী থেকে পদ্মা নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। শত বছরের পুরনো এই সেতুতে ট্রেন চলাচল দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। তাই এর পাশে নতুন রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নতুন সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৯ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন সেতু হবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ঠিক ৩০০ মিটার উত্তরে। এর দৈর্ঘ্য হবে ১.৮ কিলোমিটার। সেতুর দুই পাশে ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হবে রেল সংযোগের জন্য। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হলে সেতুর নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হবে। এসময় ব্যয় সামান্য বাড়তে বা কমতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, “হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে নতুন রেলসেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে। সেতুর ডিজাইনসহ সবকিছু নতুন করে করা হবে।” বর্তমানে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘সুবিধাদি প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা’ নামে একটি প্রকল্প চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ১১টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত ডিজাইনের কাজ চলছে। তার মধ্যে নতুন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের সমীক্ষাও রয়েছে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। জাপানের ওসিজি, ফ্রান্সের ইজিআইএস, মালয়েশিয়ার এইচএসএস এবং বাংলাদেশের সুদেব কনসাল্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড যৌথভাবে কাজ করছে। এ পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
প্রকল্প পরিচালক মো. আবিদুর রহমান বলেন, “সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এখনও চূড়ান্ত হয়নি, কাজ চলছে।” সমীক্ষা ও ডিজাইন চূড়ান্ত হলে প্রকল্প উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডিপিপি) তৈরি করা হবে। এরপর তা রেল মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো হবে। রেলওয়ের প্রকৌশলীরা জানান, বর্তমানে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ শত বছরের পুরনো হওয়ায় ট্রেন চলাচলে সীমাবদ্ধতা তৈরি করছে। নতুন ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন ব্রিজ নির্মাণ হলে রেল যোগাযোগ আরও সহজ ও গতিশীল হবে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পদ্মা নদীর বুকে দাঁড়িয়ে ১১০ বছর ধরে দেশের রেল যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে। এটি একদিকে ঐতিহাসিক নিদর্শন, অন্যদিকে প্রকৌশল কীর্তি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্রিজটি কিছু অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবু আজও এর ওপর দিয়ে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করে। ২০১৫ সালে ব্রিজটি ১০০ বছর পূর্ণ করলে রেল বিভাগ একটি মূল্যায়ন করে। তারা বলেছে, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ থাকলে ২০৪০ সাল পর্যন্ত এটি নিরাপদে ব্যবহৃত হতে পারে।
ব্রিজের স্টিল অংশ ও রেললাইন ফিটিংস নিয়মিত মেরামত করা হয়। প্রতি পাঁচ বছরে একবার রং করা হয় এবং তিন বছর অন্তর বিয়ারিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এসব কাজে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিমুক্ত রাখা হয়। বর্তমানে এই ব্রিজ দিয়ে ট্রেন চলাচলের সর্বোচ্চ গতি ২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। এর আগে সংস্কারের পর গতি ছিল ৪০ কিলোমিটার, কিন্তু বয়স বাড়ায় তা কমে এসেছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৮টি ট্রেন চলাচল করে। তার মধ্যে ১৮টি যাত্রীবাহী এবং ১০টি মালবাহী ট্রেন।