বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের ওপর ‘পাল্টাপাল্টি শুল্ক’ বা রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৫ সালের এপ্রিলের শুরুর দিকে এই ঘোষণা দেন তিনি। তবে জুলাইয়ের ৯ তারিখ পর্যন্ত সেই শুল্ক আরোপ স্থগিত করা হয়। নির্ধারিত সময়সীমার আগেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে চুক্তিতে একমত হওয়ার খবর জানিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য চুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। ৯ জুলাইয়ের আগে ওয়াশিংটনে চার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শেষে দুই দেশ চুক্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলোচনায় যুক্ত থাকা কর্মকর্তারা।
পাকিস্তানের বাণিজ্যসচিব জাওয়াদ পালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল এমন একটি পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি করা, যার মাধ্যমে পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহালের ঝুঁকি এড়ানো যায়। এই শুল্ক মূলত কৃষিপণ্য ও তৈরি পোশাক খাতে প্রযোজ্য। বছরের শুরুতে সাময়িকভাবে সুবিধাটি স্থগিত করা হলেও চুক্তি না হলে ৯ জুলাইয়ের পর তা পুনরায় কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলোচনায় শুধু শুল্ক সুবিধাই নয়, বরং পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়েও অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে খনিজ, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে মার্কিন বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আলোচনায় বেলুচিস্তানের রেকো ডিক তামা ও সোনার খনি প্রকল্প এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তি হলে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরালো হবে। এদিকে, মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট পূর্বেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আলোচনা সন্তোষজনক হলে যুক্তরাষ্ট্র সময়সীমা নিয়ে নমনীয়তা দেখাতে পারে। তবে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করার পক্ষে, যাতে রপ্তানিকারক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দূর হয়। তারা আরও জানান, চূড়ান্ত চুক্তির ঘোষণা তখনই আসবে, যখন যুক্তরাষ্ট্র অন্য বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে চলমান আলোচনা শেষ করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে শুধু শুল্ক সুবিধা নয়, বরং পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় আরোপিত উচ্চ শুল্কের ফলে যে বাণিজ্যিক ক্ষতি হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠতে এই চুক্তি বড় ভূমিকা রাখবে।