সরকার ঢাকা–গাজীপুর রুটে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) সেবা চালুর পরিকল্পনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, সেবাটি কার্যকর করার জন্য অতিরিক্ত সময় ও অর্থায়নের প্রয়োজন হবে।
শ্রী শেইখ মঈনউদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা-সচিবালয় সম্পর্কিত সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী, এ তথ্য জানান। তিনি এটি সাংবাদিকদের প্ল্যাটফর্ম রিপোর্টার্স ফর রেল অ্যান্ড রোড-এর সঙ্গে রেল ভবনে এক মতবিনিময় সভায় আলোচনা করার সময় জানান।
বিআরটি প্রকল্পটি দেশের প্রথম নিবেদিত দ্রুতগামী বাস সেবা হিসেবে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল। মূল লক্ষ্য ছিল ঢাকা-গাজীপুর ব্যস্ত করিডোরে যাতায়াতের চাপ কমানো। তবে, প্রকল্পটি দীর্ঘ দেরিতে বাস্তবায়িত হওয়ায় যাত্রীদের বহু বছর দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়েছে।
জুন ২০২৫ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ৯৭.৪৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকার সরকারি কোম্পানি ঢাকা বিআরটি পিএলসি ইতিমধ্যেই বাস ক্রয়ের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মোট প্রকল্প খরচ ৪,২৬৮.৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রায় ২,৮০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই ব্যয় হয়েছে। কয়েকটি উঁচু স্টেশনে এসকেলেটরও স্থাপন করা হয়েছে, তবে গত বছরের জনবিদ্রোহের সময় ২২টি এসকেলেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মঈনউদ্দিন জানান, বিআরটি সেবা সম্পূর্ণ কার্যকর করতে প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এছাড়া বাস সংগ্রহের সময়ও প্রয়োজন, যা ইন্টারিম সরকারের মেয়াদের বাইরে চলে যাবে। তাই, আসন্ন সরকারকে বাস সংগ্রহ ও স্টেশন সংস্কার করে সেবা চালুর দায়িত্ব নিতে হবে।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হাদিজ্জামান বলেন, পরিকল্পনার ত্রুটি, খারাপ নকশা এবং অনুপযুক্ত রুট নির্বাচনের কারণে প্রকল্পটি অযোগ্য হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত রুটটি মূল পরিকল্পনার অংশ হলেও, এটি ঢাকা শহরের মূল কেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত না হলে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। তাই, আরও বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বরং বিদ্যমান সড়কের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার দিকে নজর দেওয়া উচিত।
মূলত গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট নামে পরিচিত এই প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল, যা শুরু হয়েছিল ২,০৩৭.৯ কোটি টাকায়। তবে জমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি পুনর্বিন্যাস, নকশা পরিবর্তন, ঠিকাদারের আর্থিক সমস্যা এবং মহামারির কারণে প্রকল্প অনেক দেরিতে শেষ হয়েছে। এখন মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ৪,২৬৮.৩ কোটি টাকায় এবং শেষ সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৫।
এই দ্রুতগামী বাস সেবার লক্ষ্য ছিল গাজীপুর থেকে ঢাকায় যাত্রা ৩৫–৪০ মিনিটে সম্পন্ন করা, যা এখন ১.৫ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নিচ্ছে।শ্রী মঈনউদ্দিন বলেন, সরকার এখন একটি সমন্বিত পরিবহন মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের কোনো সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি হয়নি। ফলে, সড়ক, রেল, নৌ এবং বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পরিকল্পনার ওপর কাজ করছে, যা সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি করছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রধান সড়কগুলো ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ মোকাবিলা করতে পারছে না। তাই এখন রেল ও নৌপথ ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন জানান, রেলের লোকসান কমাতে ভাড়া সমন্বয় করা জরুরি। তিনি বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে শেষবার ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছিল, অথচ অন্যান্য সব জিনিসের দাম বেড়েছে। রেলওয়ে এখন প্রতি ২ টাকা খরচে মাত্র ১ টাকা আয় করছে। লোকমোটিভ ও যাত্রীবাহী গাড়ির অভাবে প্রত্যাশিত সেবা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
সভায় ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ, রেল ও রোড রিপোর্টার্সের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক তাওহিদুল ইসলামসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।

