দেশে গ্যাস অনুসন্ধান এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বাপেক্স দুটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রথমটি হলো ‘২০০০ হর্স পাওয়ার রিগ ক্রয়’ এবং দ্বিতীয়টি শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট-১ অনুসন্ধান কূপসহ চারটি মূল্যায়ন ও উন্নয়ন কূপ খনন। এই দুই প্রকল্পের জন্য মোট বাজেট ধরা হয়েছে ২,১৩২ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৩,৮০০ থেকে ৪,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে সর্বোচ্চ ২,৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই ঘাটতির কারণে শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গৃহস্থালি ব্যবহারকারীরা প্রায়ই সংকটে পড়ছেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. শামসুল আলম বলেছেন, “প্রকল্প নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আগে দেখা গেছে, অনেক প্রকল্প শুরু হলেও সময়মতো শেষ হয়নি। এ ধরনের সমস্যা যেন আর না হয়, এজন্য পরিকল্পনা কমিশন ও জ্বালানি বিভাগের নজরদারি অত্যন্ত জরুরি।”
প্রকল্পটির বাজেট ধরা হয়েছে ৫৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে সরকার দেবে ৫২০ কোটি এবং বাপেক্স নিজস্ব অর্থায়ন করবে ৫৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। নতুন রিগের মাধ্যমে বাপেক্সের গ্যাস কূপ খননের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পুরোনো রিগের কারণে এখনো খনন কার্যক্রমে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়, যা নতুন প্রকল্প দূর করবে।
এই প্রকল্পে ভোলায় চারটি মূল্যায়ন ও উন্নয়ন কূপ এবং শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট-১ অনুসন্ধান কূপ খনন করা হবে। বাজেট ধরা হয়েছে ১,৫৫৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, যেখানে সরকার দেবে ১,২৪৪ কোটি ৮০ লাখ এবং বাপেক্স নিজস্ব অর্থায়ন করবে ৩১০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত।
এতে কূপ খননের পাশাপাশি সংযোগ সড়ক নির্মাণ, কূপ পরীক্ষণ, উন্নয়নমূলক কাজ, সিমুলেশন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ক্রয়সহ অন্যান্য কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বাপেক্সের এমডি মো. ফজলুল হক জানিয়েছেন, “কূপগুলোতে গ্যাস মজুৎ আবিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। পরীক্ষণ সফল হলে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।”
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, “এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্যাস আমদানির ওপর দেশের নির্ভরতা কমবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।”
পরিকল্পনা কমিশন আরও জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই দুই প্রকল্পের পাশাপাশি সিলেটে ১২নং কূপ খনন এবং হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও মেঘনা ফিল্ডে ৩ডি সাইসমিক জরিপের জন্যও অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে প্রকল্পগুলো শুরু হওয়ার কথা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে, এখনো একনেক সভায় আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রাপ্ত হয়নি।

