আগামী শনিবার (১ নভেম্বর) চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ এক দশক পর চেম্বারে সরাসরি ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর সব কমিটি গঠিত হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এবার নির্বাচনের পথে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে বিষয়টি। স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুই পক্ষের বিরোধ।
এ বছর নির্বাচনে ইতিমধ্যে দুটি প্যানেল ঘোষণা করেছে ব্যবসায়ীদের দুটি ধারা। সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃত্বে আছেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম নুরুল হক। অন্যদিকে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক। দুজনই এর আগে চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্বে দায়িত্ব পালন করেছেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের ভোটে ব্যবসায়ীরা নির্বাচিত করেন ১২ জনকে সাধারণ শ্রেণিতে, ৬ জনকে সহযোগী শ্রেণিতে এবং ৩ জন করে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে। তবে এইবার অকার্যকর সংগঠনকে সদস্য করার অভিযোগে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ এই ছয় পদে প্রার্থী দেয়নি। ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের ৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে আছেন।
দুই শ্রেণির আটটি সংগঠনকে ভোটের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল। তিনি এফবিসিসিআইয়ের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনালে এবং আদালতেও রিট করেন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাল্টা রিট করেছে। বিষয়টি এখনও আদালতের বিচারাধীন। সব বিতর্কের মাঝেও চলছে দুই প্যানেলের নির্বাচনী প্রচারণা। ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি এখন সরাসরি ভোট ও ফলাফলের দিকে।
অভিজ্ঞ নেতাদের নেতৃত্বে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরাম:
চট্টগ্রাম চেম্বারের ২৪ পদে প্রার্থী দিয়েছে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরাম। প্যানেলের অধিকাংশ সদস্য বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পোশাক, পেট্রো-কেমিক্যাল, লজিস্টিকস, মেরিন ও ট্রেডিং খাতের ব্যবসায়ীরা এই প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন। প্যানেলের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম এ সালাম।
প্যানেলের নেতৃত্বে আছেন সিকম গ্রুপ ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক। দেশের পেট্রো-কেমিক্যাল, শিপিং, রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন খাতে তাঁর ব্যবসা রয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক।
প্যানেলে পোশাক খাতের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী এবং ব্যবসায়ী আবু হায়দার চৌধুরী। শিপিং ও মেরিন খাত থেকে নির্বাচন করছেন মো. গোলাম সরওয়ার, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল আজাদ এবং মোহাম্মদ মশিউল আলম। তালিকায় আছেন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমজাদ হোসাইন চৌধুরী।
অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে আছেন রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ও পরিবেশক সংগঠন বারবিডার সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। ট্রেডিং, লজিস্টিকস ও অন্যান্য খাত থেকে প্রার্থী হয়েছেন কামাল মোস্তফা চৌধুরী, আমান উল্লা আল ছগির, মোহাম্মদ শফিউল আলম, এ এস এম ইসমাইল খান, আসাদ ইফতেখার, মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, শহিদুল আলম, সরোয়ার আলম খান, মো. জাহিদুল হাসান, মো. নুরুল ইসলাম এবং মো. সেলিম নুর।
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, “আমরা চাই প্রকৃত ব্যবসায়ী যারা, তাঁরা চেম্বারের নেতৃত্বে আসুন। সুষ্ঠু ভোট হোক এবং ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক। এটাই কাম্য।”
তরুণ-প্রবীণ মিলিত সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ:
চট্টগ্রাম চেম্বারের ১৮ পদে প্রার্থী দিয়েছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। তারা টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি বাদ দিয়েছেন। প্যানেলের লক্ষ্য—পোশাক, তৃণমূল ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা সহ সব খাতের ব্যবসায়ীকে চেম্বারে প্রতিনিধিত্ব দেওয়া। প্যানেলের যুক্তি, সব খাতের ব্যবসায়ী চেম্বারে থাকলে চট্টগ্রামের সামগ্রিক ব্যবসার প্রসার সম্ভব। এজন্য তরুণ ও প্রবীণ ব্যবসায়ীদের মিলিয়ে প্যানেল সাজানো হয়েছে। প্যানেলের নেতৃত্বে আছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি এস এম নুরুল হক। তিনি মোসমার্ক গ্রুপের কর্ণধার। বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সভাপতি এবং একসময় অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। পোশাকশিল্প ও ট্রেডিং ব্যবসাতেও তাঁর সম্পর্ক রয়েছে।
প্যানেলের পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা হলেন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ মুছা, মো. আবচার হোসেন এবং বিজিএপিএমইএর সদস্য মো. আরিফ হাসান। তৃণমূল ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন কাজী ইমরান এফ রহমান, এস এম কামাল উদ্দিন, আহমদ রশিদ আমু, মো. কামরুল হুদা এবং মোস্তাক আহমদ চৌধুরী।
স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আছেন এ টি এম রেজাউল করিম, মো. হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, মোহাম্মদ আজিজুল হক, মোহাম্মদ রাশেদ আলী এবং জসিম উদ্দিন চৌধুরী। এ টি এম রেজাউল করিম চট্টগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সহসভাপতি। আজিজুল হক পরিবহন খাতে চারটি সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। জসিম উদ্দিন চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক।
প্যানেলের অন্যান্য নির্বাচিত প্রার্থীর মধ্যে আছেন ব্যবসায়ী ও নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদ-উল আলম চৌধুরী, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর ছেলে ইমাদ এরশাদ, কাস্টমস এজেন্ট ও লিফট ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আমদানিকারক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ আইয়ুব।
নির্বাচনের আগে সরে যাচ্ছেন প্রার্থীরা:
চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচনের আগে কিছু প্রার্থী নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে গেছেন। ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন তিনজন। তাঁরা হলেন ওয়াইএনটি লিমিটেডের তাওসিফ ইমরোজ, আহমের ইন্টারন্যাশনালের মো. পারভেজ ইকবাল শরীফ এবং মেরিডিয়ান গ্রুপের সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশা। এর আগে একইভাবে সরে গেছেন রাকিবুল আলম চৌধুরী ও সারতাজ মোহাম্মদ ইমরান। যদিও তারা কোনো প্যানেলকে সমর্থনের কথা জানাননি।
নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন মো. ছালামত আলী, জাবেদ সিদ্দিক, মাসুদ আহমেদ, মো. আবদুল কাদের, মো. আবু হেনা ফারুকী, মো. দেলওয়ার হোসেন, মো. জামাল উদ্দিন, মো. নাজমুল হুদা, রিয়াজ ওয়াজ ও মো. ফওজুল আলিফ খান। তবে কেউ কেউ ভবিষ্যতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি মো. ছালামত আলী জানিয়েছেন, তিনি ইউনাইটেড বিজনেস ফোরাম সমর্থন সত্বেও নির্বাচন করবেন না। তিনি বলেন, “আমি মৌখিকভাবে ঘোষণা করেছি আমি নির্বাচন করব না। বিভিন্ন সভাতেও বিষয়টি জানিয়েছি।” নির্বাচন বোর্ডের সদস্য আহমেদ হাছান বলেন, “চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় যাদের নাম আছে, ব্যালটেও তাঁদের নাম থাকবে। আচরণবিধি প্রকাশ হয়েছে। এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি।”

