সৌদি আরবের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশী কর্মী নির্ভর। দেশটির অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন খাতের সম্প্রসারণে বিদেশী কর্মীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তবে অনেক সময় এসব কর্মী বিভিন্ন আর্থিক সমস্যায় পড়েন। বিশেষত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো একটি খেলাপি হয়ে গেলে বা নির্দিষ্ট সময়ে বেতন না দিতে পারলে বিদেশী কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে ওঠে। এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় সৌদি সরকার নতুন একটি বীমা প্রকল্প চালু করেছে। খবর আরব নিউজের।
সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় সরকারি বীমা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রকল্প চালু করেছে। মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশী কর্মীদের এই বীমার আওতায় আনা হবে, যা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কোনো প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক সংকটে পড়লে বা সময়মতো কর্মীদের বেতন দিতে ব্যর্থ হলে, এই বীমা কর্মীদের সেই সংকট থেকে সুরক্ষা দেবে।
প্রকল্পটির অধীনে বিদেশী কর্মীরা তাদের বেতন না পেলে বীমা থেকে সহায়তা পাবেন। এছাড়া, কেউ যদি আর্থিক সমস্যার কারণে দেশে ফিরে যেতে চান, তবে তাদের ভ্রমণ টিকিট কেনার ব্যবস্থাও এই বীমার আওতায় করা হবে। এটি বিদেশী কর্মীদের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তার চাদর হিসেবে কাজ করবে, যা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে।
সৌদি আরবের অর্থনীতি গত কয়েক বছরে তেলনির্ভরতা কাটিয়ে বৈচিত্র্যময় খাতগুলোর দিকে ধাবিত হয়েছে। পর্যটন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সেবা খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য দেশটি বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষত বেসরকারি এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে তারা শ্রমবাজারের নীতি ও বিধিবিধানে পরিবর্তন এনেছে। এই নতুন বীমা প্রকল্পটি সেই বৃহত্তর সংস্কার কার্যক্রমেরই অংশ, যা সৌদি আরবকে বিদেশী কর্মীদের জন্য একটি আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছে।
এ প্রসঙ্গে সৌদি মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বীমা প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশী কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, মজুরি সুরক্ষা আইন ও চুক্তিপত্রের অধিকারও রক্ষা করা হবে। নতুন এই উদ্যোগ নিয়োগদাতা এবং কর্মী উভয়ের জন্যই উপকারী হবে, কারণ এটি দু’পক্ষেরই অধিকার সুরক্ষিত করবে এবং সৌদি আরবের শ্রম বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
উল্লেখ্য, নতুন এই বীমা প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য সৌদি মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি চালু হয়েছে ৬ অক্টোবর, ২০২৪। এর মাধ্যমে সৌদি আরবে কর্মরত বিদেশী কর্মীরা আর্থিক সংকটের মুখে পড়লে দ্রুত সহায়তা পাবেন, যা তাদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ।
এই প্রকল্প সৌদি আরবের বিদেশী কর্মীবহুল অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং দেশটির অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ধারায় এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।