টানা তৃতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সাফল্য জমা হলো আফগানিস্তানের ঝুলিতে। সবগুলো সিরিজই তারা শারজাতে জিতেছে। দ্বিতীয়বারের মতো আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ।
সোমবার দুবাইয়ের শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো আফগানরা, তাদের ঝুলিতে জমা হলো টানা তৃতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সাফল্য। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা তাদের দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়। গত বছর ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। সব ফরম্যাট মিলিয়ে টানা চারটি সিরিজ হারলো বাংলাদেশ।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। ৫০ পেরিয়ে হঠাৎ বিপর্যয়ে পড়লেও অধিনায়ক মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ জুটিতে ঠিক পথে থাকে তারা। মিরাজের হাফ সেঞ্চুরি ও মাহমুদউল্লার সেঞ্চুরি ছুঁইছুঁই ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৪৪ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ১০০ রানের আগে ৩ উইকেট হারালেও বিপদে পড়তে হয়নি আফগানিস্তানকে। সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া গুরবাজ ও ম্যাচসেরা ওমরজাইয়ের জুটিতে জয়ের পথে থাকে তারা। গুরবাজ ফেরার পর ওমরজাই ও নবির ব্যাটে ৪৮.২ ওভারে জয় নিশ্চিত হয় আফগানদের।
লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনী জুটি থেকে ৪১ রান পায় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের অভিষিক্ত পেসার নাহিদ রানার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে ১৮ বলে ১৪ রান করেন সাদিকুল্লাহ অতল। আফগানদের দ্বিতীয় জুটি বড় হতে দেননি মুস্তাফিজুর রহমান। ১৪তম ওভারের শেষ বলে রহমত শাহকে নিজেই তালুবন্দি করেন বাঁহাতি এই পেসার। পরের উইকেটটিও মুস্তাফিজের শিকার, এবার তিনি ফেরান আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদিকে।
৮৪ রানে ৩ উইকেট হারায় আফগানিস্তান, তবে এক পাশ আগলে রাখেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া গুরবাজ। ওমরজাইকে সঙ্গে নিয়ে এখান থেকে জুটি গড়ে তোলেন আফগান এই ওপেনার। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে চতুর্থ উইকেটে এ দুজন যোগ করেন ১০০ রান। এর মাঝে সেঞ্চুরি তুলে নেন দারুণ ব্যাটিং করা গুরবাজ। ১২০ বলে ৫টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১০১ রান করে মিরাজের শিকারে পরিণত হন তিনি।
কিছুক্ষণ পরেই গুলবাদিন নাইবকে নাহিদ রানা ফিরিয়ে দিলে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। ওমরজাইয়ের সঙ্গে উইকেটে যোগ দেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবি। এ দুজনের ব্যাটে ঠিকঠাকভাবেই সামনে এগোতে থাকে আফগানরা। শেষ পর্যন্ত এ দুজনের ব্যাটেই জিতে যায় তারা। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৮ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৮ রানের জুটি গড়ে দলকে সিরিজ জেতান তারা। ৭৭ বলে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৭০ রানে অসাধারণ ইনিংস খেলেন ওমরজাই। নবি ২৭ বলে ৫টি চারে অপরাজিত ৩৪ রান করেন। বাংলাদেশের অভিষিক্ত পেসার নাহিদ রানা ও মুস্তাফিজুর রহমান ২টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট পান মিরাজ।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ভালো শুরুই পায় তারা। উদ্বোধনী জুটিতে ৮.৩ ওভারে ৫৩ রান যোগ করেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকার। কিন্তু এই জুটি ভাঙতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। চোখের পলকে পাল্টে যায় তাদের স্কোরকার্ডের চেহারা। ৫৩ থেকে ৭২ রানের মধ্যে একে একে ফিরে যান সৌম্য, তানজিদ, জাকির হাসান ও তাওহিদ হৃদয়।
সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকা সৌম্য ২৩ বলে ৩টি চারে ২৪ রান করেন। ২৯ বলে ৩টি চারে ১৯ রান করেন তানজিদ। এক বছরেরও বেশি সময় পর একাদশে সুযোগ পাওয়া জাকির রান আউটে কাটা পড়ার আগে ৭ বলে ৪ রান করেন। ক্যারিয়ারের শুরুর ভাগে দারুণ ধারাবাহিক ব্যাটিং করা হৃদয় গত কয়েক ম্যাচ ধরে নিজের ছায়া হয়ে আছেন। আজও রানের দেখা পাননি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান, ১৪ বলে ৭ রান করে ফেরেন তিনি।
ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১১৯ বলে ৬৬ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলেন মিরাজ। অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এই তালিকায় সবার উপরে শান্ত, অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ওয়ানডে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আমিনুল ইসলাম বুলবুল নেতৃত্বের অভিষেকে খেলেন ৭০ রানের ইনিংস।