এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হারের পর ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও আলোচনা থামেনি। হারের পেছনে বাংলাদেশের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার কৌশলগত ভুল ও খেলোয়াড় বাছাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেইসঙ্গে দলের রক্ষণভাগ দুর্বল হয়ে পড়ার পেছনে ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষের অনুপস্থিতির বিষয়টি সামনে এসেছে।
জাতীয় দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ। রাইট-ব্যাক পজিশনে তাঁর বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভুটানের বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। এরপর আর ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচেই ফিরতে পারেননি। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে পুরো মৌসুম এবং জাতীয় দলের পাঁচটি ম্যাচ মিস করেছেন এই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার।
বিশ্বনাথের চোটটি ছিল হাঁটুর। অক্টোবর-নভেম্বর সময়টা গেছে সমস্যার ধরন নির্ধারণে। পরে ২০ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডে অস্ত্রোপচার করান। এখনো মাঠে ফিরতে পারেননি। তবে আশা রাখছেন, আগামী জুলাই থেকে বল নিয়ে অনুশীলন শুরু করতে পারবেন।
বিশ্বনাথ বললেন,
“আমি এখন জিম ও ওয়েট ট্রেনিং করছি। সামনে মাস থেকে মাঠে ফেরার চেষ্টা থাকবে। লক্ষ্য এএফসি কাপে ১২ আগস্ট বসুন্ধরার হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে মাঠে নামা।”
জাতীয় দলের হয়ে ইনজুরিতে পড়লেও চিকিৎসার পুরো খরচই বহন করছে বসুন্ধরা কিংস। ক্লাবের ফিজিও আবু সুফিয়ান সরকারের তত্ত্বাবধানে বিশ্বনাথ এখন রিহ্যাব পর্যায়ে রয়েছেন। তিনি জানান,
“বিশ্বনাথের ইনজুরি ছিল খুব জটিল। সমস্যাটা ছিল কার্টিলেজে, যা সাধারণ ইনজুরির চেয়ে ভয়াবহ। অস্ত্রোপচারের পর সে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও একবার পর্যবেক্ষণের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
ফুলব্যাক পজিশনে একজন খেলোয়াড়ের দায়িত্ব অনেক। আক্রমণ যেমন তৈরি করেন, তেমনি রক্ষণও সামলাতে হয়। ইনজুরি থেকে ফিরে আগের মতো ফিটনেসে ফেরা কঠিন হলেও আত্মবিশ্বাস হারাননি বিশ্বনাথ।
“পরিশ্রম করলে অনেক কিছুই সম্ভব। আমি এখন অনেকটাই সুস্থ। চেষ্টা করব পুরো ফিট হয়ে ফিরতে।”
বিশ্বনাথ ঘোষ শুধু ভালো ডিফেন্ডারই নন, তাঁর লম্বা থ্রো-ইন বাংলাদেশের আক্রমণের বড় অস্ত্র। দলের মধ্যে মনোবল ধরে রাখার ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রণী। ২০২৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠলে নিজ উদ্যোগে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। পরে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন তাঁকে সমপরিমাণ বোনাস দেন। একই বছর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ শেষে বিশ্বনাথ ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে স্টেডিয়ামে পতাকা হাতে প্রদক্ষিণ করেন। তাঁর দেখানো পথে হাঁটেন দলের আরও কয়েকজন ফুটবলার।
বিশ্বনাথের অনুপস্থিতিতে রাইট-ব্যাক পজিশনে খেলেছেন তাজ উদ্দিন ও শাকিল আহাদ তপু। দুজনই ভালো খেলেছেন। তবে বিশ্বনাথ নিজের জায়গা ফিরে পেতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। বলেন,
“তাজ আর শাকিল ভালো করছে। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে দলে ফিরতে চাই। লক্ষ্য সেপ্টেম্বরে ফিফা উইন্ডো কিংবা অক্টোবরে হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচে খেলা।”
সিঙ্গাপুর ম্যাচে হারের পর রক্ষণের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্বনাথ বলেন,
“জাতীয় দলে যারা খেলে, তারা সবার আগে দেশের জন্য খেলে। গোল করার পাশাপাশি গোল না খাওয়ার দায়ও সবাই নিতে চায়। সবাই মনপ্রাণ উজাড় করেই খেলে।”
বাংলাদেশ ফুটবলে এখন তুমুল উন্মাদনা। হামজা চৌধুরী ও সামিত সোমের জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে। এমন সময় জাতীয় দলে না থাকা একজন অভিজ্ঞ ফুটবলারের জন্য মানসিকভাবে কঠিন। বিশ্বনাথ বলেন,
“অবশ্যই খারাপ লেগেছে। এত বড় ম্যাচ, আবার বিদেশি মানের ফুটবলার আসছে—আমি নেই। এজন্যই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও কিছুদিন দূরে ছিলাম। যাতে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়।”
জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় ইনজুরিতে পড়লে ফিফার ‘ক্লাব প্রোটেকশন স্কিম’-এর আওতায় খেলোয়াড়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন করে। তবে বিশ্বনাথ ইনজুরির পর ক্লাবের অনুশীলনে যুক্ত থাকায় ২১ দিনের সময়সীমা পার হয়ে যায়। ফলে সেই সুবিধা আর নিতে পারেনি তাঁর ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। তাই ক্লাবই তার চিকিৎসার সব খরচ চালিয়েছে।
বিশ্বনাথ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন,
“বসুন্ধরা কিংসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করা যাবে না। ক্লাব আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। আমি এবার ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চটা দিতে চাই। এখনো ক্লাবে জিম করছি।”