‘পিএসজি দুই পা-ই দিয়ে রেখেছে কোয়ার্টার ফাইনালে’—দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর আগে এমন মন্তব্য করেছিলেন ডিএজেডএনের এক ধারাভাষ্যকার। তিনি তখন ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন—এই ম্যাচে ইন্টার মায়ামির পক্ষে আর কিছু করার নেই।
আটলান্টার মার্সিডিজ-বেঞ্জ স্টেডিয়ামে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে লিওনেল মেসির দল ইন্টার মায়ামিকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। তবে গোলের চেয়েও বেশি আলোচনায় ছিল মাঠের নিয়ন্ত্রণ। পুরো প্রথমার্ধে মেসিদের একরকম দাঁড়াতেই দেয়নি পিএসজি।
প্রথমার্ধ শেষে ৪-০ গোলে এগিয়ে ছিল ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। আর মেসি? তাকে যেন খুঁজেই পাওয়া যায়নি। মাঠে এতটা নিষ্প্রভ, এতটা অসহায় মেসিকে দর্শকরা খুব কমই দেখেছেন। ধারাভাষ্যকারের কথায় স্পষ্ট ছিল, এমন পারফরম্যান্সে মায়ামির ফিরে আসা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য খানিকটা ঘুরে দাঁড়ায় ইন্টার মায়ামি। অন্তত আরও কোনো গোল খায়নি। সুযোগও তৈরি করেছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে সহজটি নষ্ট করেন লুইস সুয়ারেজ। মেসির নিখুঁত ক্রসে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বলের সঙ্গে ঠিকমতো সংযোগ করতে পারেননি উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড।
ম্যাচটি ঘিরে আগ্রহের কমতি ছিল না। মেসির সাবেক ক্লাব পিএসজির বিপক্ষে মাঠে নামাটাই ছিল সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। অনেকে ভেবেছিলেন, ক্লাব ছাড়ার বেদনা মাঠে হয়তো প্রতিশোধ হয়ে ফিরবে। কিন্তু বাস্তবে মেসিরা ছিলেন পুরোপুরি ছায়া।
অন্যদিকে সাবেক শিষ্যকে হারিয়ে লুইস এনরিকের দল যেন ইউরোপের মঞ্চ থেকে এবার বিশ্বমঞ্চ দখলের পথেই এগিয়ে চলেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে পিএসজির প্রতিপক্ষ হবে ব্রাজিলের ফ্ল্যামেঙ্গো অথবা জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখ। আজ রাতেই মুখোমুখি হবে দল দুটি।
প্রথমার্ধে ইন্টার মায়ামির বিপক্ষে যেভাবে খেলেছে পিএসজি, সেই ছন্দ ধরে রাখতে পারলে শেষ চারে তাদের জায়গা নিশ্চিত ভাবেই দৃঢ় হবে। তবে প্রতিপক্ষ এবার অনেক কঠিন হবে, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
ম্যাচের শুরুতে প্রথম ১০ মিনিটে বল দখলের দিক থেকে পিএসজির আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ওই সময় বলের ৮৭ শতাংশই ছিল তাদের দখলে। ৬ মিনিটেই পর্তুগিজ মিডফিল্ডার জোয়াও নেভেস গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। এরপর একের পর এক আক্রমণে নাস্তানাবুদ করে ইন্টার মায়ামিকে।
৩৯ মিনিটে আবারও গোল করেন নেভেস। এরপর আসে তমাস আভিলেসের আত্মঘাতী গোল। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আশরাফ হাকিমি স্কোরলাইন ৪-০ করে দেন।
ম্যাচ শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় একটি ছবি—মাঠে হতাশ মেসি, মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। অনেকেই বলছেন, ক্যারিয়ারের অন্যতম বাজে হার এটি মেসির জন্য। ভাগ্যিস পিএসজি আরও গোল করেনি, নাহলে হয়তো ফিরে আসত সেই দুঃসহ স্মৃতি—২০০৯ সালে বলিভিয়ার কাছে আর্জেন্টিনার ৬-১ হার কিংবা ২০২০ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার ৮-২ গোলে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার দিনগুলো।