পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট আলেহান্দ্রো তলেদোকে দেশটির একটি আদালত ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এই রায় সোমবার ঘোষণার পর তলেদোর বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, যা ব্রাজিলভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওদেব্রেখতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত জানায় যে, তলেদো ৩৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ গ্রহণ করেছেন, যা তিনি পেরুতে একটি মহাসড়ক নির্মাণের ঠিকাদারি ওদেব্রেখতকে দেওয়ার জন্য নিয়েছিলেন। এই মামলা সারা লাতিন আমেরিকায় বিরাট বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির চিত্র প্রকাশিত হয়েছে।
আদালতে শুনানির সময় ৭৮ বছর বয়সী তলেদো বলেন, “আমি ক্যানসার রোগী। আমি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে চাই। আমি আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আমাকে সুস্থ হতে দিন অথবা আমাকে নিজ বাড়িতে শান্তিতে মরতে দিন।” তার এই আবেদনে আদালত কোনো বিবেচনা করেনি এবং রায়কে অপরিবর্তিত রেখেছে।
তলেদো পেরুর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার শাসনামলে, তিনি সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার এবং বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। তিনি বারবার বলেন যে, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হওয়ার পর, পেরু সরকার তাকে দেশে প্রত্যর্পণের জন্য আবেদন জানায়। দীর্ঘ আইনি বিতর্কের পর, ২০২২ সালে তাকে পেরুর হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ওদেব্রেখত নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ আমেরিকায় দুর্নীতির একটি বৃহৎ স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের বিনিময়ে ঘুষ দিয়েছে। পেরু, পানামা এবং ইকুয়েডরের মতো দেশগুলোতে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এই দুর্নীতির দায়ে কারাগারে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
ওদেব্রেখতের কর্মকাণ্ডের তদন্ত আজও চলছে, এটি গুয়াতেমালা ও মেক্সিকোর মতো দেশে বিস্তার লাভ করেছে। উল্লেখযোগ্য যে, সম্প্রতি কোম্পানিটি তাদের নাম পরিবর্তন করে নভোনর রাখে তবে এর দুর্নীতির ছায়া এখনো লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এই রায় পেরুর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দায়িত্বশীলতার অভাব এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের একটি সংকেত। পেরুর জনগণের মনে এই বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে এবং তারা চায় যে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এভাবে তলেদোর দণ্ডাদেশ পেরুর জনগণের কাছে একটি বার্তা হিসেবে কাজ করছে যেখানে তারা আশা করছে যে, সরকারের দুর্নীতি নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পেরুর রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি নতুন অধ্যায়, যেখানে জনগণের প্রত্যাশা এবং সরকারের দায়িত্ব পালনের মধ্যে সংঘাত স্পষ্ট হয়ে উঠছে।