গাজার চলমান সংঘাতে এক নতুন মোড় নিয়ে এসেছে ইসরায়েলের নিশ্চিত করা হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচিত সিনওয়ারের মৃত্যুর পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে বসেন। ব্লিঙ্কেনের লক্ষ্য ছিল সিনওয়ারের মৃত্যুকে একটি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে গাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা।
এটি ব্লিঙ্কেনের মধ্যপ্রাচ্যে ১১তম সফর, যা চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজার যুদ্ধ চলমান রয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুর জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়েছে। ব্লিঙ্কেনের সফরটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এবং এই পরিস্থিতি আমেরিকার বৈদেশিক নীতিতে পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।
ব্লিঙ্কেন বৈঠকে বলেন, “সিনওয়ারের মৃত্যুর পর গাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার একটি সুযোগ রয়েছে। আমাদের সকল জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করা এবং গাজার যুদ্ধের অবসান ঘটানো উচিত।” মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সিনওয়ারের হত্যাকে ইসরায়েলের সাফল্য হিসেবে দেখলেও, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তা যথেষ্ট নয়।
নেতানিয়াহু সিনওয়ারের মৃত্যু সম্পর্কে বলেছেন, এটি জিম্মিদের ফিরে আসা এবং যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু তিনি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। গাজার ২.৩ মিলিয়ন অধিবাসী এই সংঘাতে ব্যাপক মানবিক সংকটে পড়েছে, যেখানে অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে এবং আশ্রয়হীন অবস্থায় জীবনযাপন করছে।
উল্লেখ্য, গত রাতে লেবাননে একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে চারটি শিশু রয়েছে। এই হামলার ফলে ইসরায়েল-লেবানন সম্পর্কেও উদ্বেগ বাড়ছে এবং ব্লিঙ্কেনকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করতে হচ্ছে।
পশ্চিমা দেশগুলি সিনওয়ারের হত্যাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে দেখছে, যা নেতানিয়াহুর সরকারকে রাজনৈতিক সমর্থন দিতে পারে। তবে ইসরায়েল বলেছে, হামাসকে পুরোপুরি পরাজিত না করা পর্যন্ত তাদের যুদ্ধে বিরতি আসবে না।
এদিকে হামাস তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, তারা জিম্মিদের মুক্তি দিবে না যতক্ষণ না ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করার এবং গাজা থেকে সরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি না দেয়। গাজার পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলাকালীন সংঘাতের চক্র অব্যাহত থাকায় শান্তির সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো গাজার মানবিক সংকটের জন্য ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে আসছে এবং দ্রুত মানবিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। যেভাবে পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে উঠছে, তাতে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুবই সংকীর্ণ হয়ে আসছে এবং প্রতিদিন নতুন করে সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
সুতরাং, ভবিষ্যতে গাজার পরিস্থিতি কি দিকে যাবে, সেটিই এখন বিশ্ববাসীর কাছে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
হামাসের হামলায় নিহত ইসরাইলি ব্রিগেড কমান্ডার