নববর্ষের আগে অনুষ্ঠিত হতে চলা মার্কিন নির্বাচনে ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে নানা সমীক্ষা চলছে। সাম্প্রতিক সব গবেষণা অনুযায়ী, নির্বাচনে গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনের ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র এক শতাংশ। তবে, নীল দলের সমর্থকদের মাঝে এ সামান্য ভোটও তাদের নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হতে পারে, যা ২০১৬ সালের নির্বাচনে হারের অভিজ্ঞতার সাথে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
জিল স্টেইন, যিনি ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, আর্থিক সমতা, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো উদারনৈতিক নীতির প্রতি দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী, তার নির্বাচনী প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে বিশ্লেষকদের মতে, স্টেইনের একটি শতাংশ ভোটও কমলার হোয়াইট হাউজে পৌঁছানোর পথ বন্ধ করে দিতে পারে।
সম্প্রতি, কমলার সমর্থকরা একটি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে স্টেইনকে সরাসরি আক্রমণ করেছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উপদেষ্টা রামসি রিড উল্লেখ করেছেন, “২০১৬ সালের মতো এবারও জিল স্টেইন প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না কিন্তু কে হবেন, সেটা নির্ধারণ করতে পারবেন। ভোটারদের জন্য এটা জানা জরুরি, কমলা হ্যারিস বাদে অন্য যে কাউকে ভোট দেওয়া মানে ট্রাম্পকেই ভোট দেওয়া।”
এবারের নির্বাচনের প্রধান দুই প্রার্থী, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস, উভয়েই ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বিশেষ করে, বাইডেন প্রশাসনের দায় ভার কমলার ওপর বর্তায় কিন্তু ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেক ভোটারই গাজার সংকটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের নীতির প্রতি অসন্তুষ্ট।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত মে মাসে ডাটা ফর প্রোগ্রেসের সমীক্ষায় ৮৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমর্থক গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পক্ষে। আর ৫৬ শতাংশ ডেমোক্র্যাট মনে করেন, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যা।
এদিকে, গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এরপর কমলার প্রার্থিতায় বিভিন্ন সমীক্ষা তাকে ট্রাম্পের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে রাখছে, তবে ব্যবধান সর্বদা এক-দুই শতাংশের মধ্যে। সর্বশেষ ওয়াশিংটন পোস্টের সমীক্ষা অনুযায়ী, দুই প্রার্থীর সমর্থনই ৪৭ শতাংশে স্থিতিশীল। ফাইভথার্টিএইটের এক সমীক্ষায় কমলার সমর্থন ৪৮ দশমিক দুই শতাংশ এবং ট্রাম্পের ৪৬ দশমিক তিন শতাংশ দেখা গেছে।
মার্কিন নির্বাচনে ফলাফল নির্ভর করে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ পদ্ধতির ওপর, যেখানে বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যের ফলাফল একই থাকে। তবে কিছু অঙ্গরাজ্য, যেগুলোকে দোদুল্যমান রাজ্য বলা হয়, নির্বাচনের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফাইভথার্টিএইটের সর্বশেষ সমীক্ষায়, বড় চার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে (মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলিনা) দুই প্রার্থীর ব্যবধান এক শতাংশের কম। এখানে স্টেইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন, বিশেষ করে মিশিগানে।
আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, মিশিগানে জনসংখ্যার অনুপাতে সবচেয়ে বেশি আরব বংশোদ্ভূত মার্কিনি বাস করেন। সেখানে মুসলিম মার্কিনিরা ‘অ্যাবানডন হ্যারিস’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন, যা স্টেইনকে সমর্থন করে।
সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের (সিএআইআর) এক জরিপে দেখা যায়, মুসলিম ভোটারদের মাঝে কমলা ও স্টেইনের সমর্থন প্রায় সমান। তিনটি অঙ্গরাজ্যে, বিশেষ করে অ্যারিজোনা, মিশিগান ও উইসকনসিনে স্টেইনের সমর্থন কমলার চেয়েও বেশি।
মার্কিন নির্বাচনে মুসলিম ভোটারদের ভূমিকা অতীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০২০ সালের নির্বাচনে ৬৯ শতাংশ মুসলিম ভোটার বাইডেনকে সমর্থন করেছিলেন, যেখানে ট্রাম্প পেয়েছিলেন মাত্র ১৭ শতাংশ। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে এসব ভোটারদের নির্বাচনী সিদ্ধান্তেই প্রকট হয়ে উঠেছিল ব্যবধান।
গত ২০১৬ সালের নির্বাচনে গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন একবারেই হিলারি ক্লিনটনের জন্য ভোট ভাগ করেছেন। মার্কিন ম্যাগাজিন নিউজউইকের তথ্য অনুযায়ী, সেবার মিশিগানে ক্লিনটনকে ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিল ট্রাম্প, যেখানে স্টেইন পেয়েছিলেন ৫১ হাজার ভোট। পেনসিলভেনিয়ায় ট্রাম্প ক্লিনটনকে ৪৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন এবং স্টেইনের ব্যালটে পড়েছিল প্রায় ৫০ হাজার ভোট।
এবারের নির্বাচনে জিল স্টেইনের ভূমিকা এবং মার্কিন জনগণের মতামত আবারো ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে যে, এবারের নির্বাচনে হবে এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।