লেবাননের বালবেক শহরে ইসরাইলি বাহিনীর হামলার বর্বরতা আর তীব্র বিস্ফোরণে প্রতিনিয়ত কেঁপে উঠছে পূর্বাঞ্চল।
সোমবার দিনব্যাপী ইসরাইলের তাণ্ডবে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬০ জন লেবানিজ নাগরিক। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত মোট দুই হাজার ৭১০ জন লেবানিজ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১২৭ জন শিশু ছিলো। বর্তমানে আহতের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। এমন অবস্থায় গোটা দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়ে উঠেছে অসংখ্য মানুষের।
ইসরাইলি বাহিনীর হামলা থামছেই না। বরং তারা লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় বাঙ্কার-বাস্টিং বোমার ব্যবহার বাড়িয়ে চলেছে। এই বোমাগুলো এতটাই শক্তিশালী যে, ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গেও আঘাত হানতে সক্ষম। একটি ভবনকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে মুহূর্তেই। যুদ্ধের ময়দানে এমন ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের ব্যবহার বেসামরিক জীবনে আরও গভীর প্রভাব ফেলছে।
গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরাইল-হিজবুল্লাহর মধ্যে সীমান্তবর্তী সংঘাত দীর্ঘদিন ধরে চলমান। যেখানে ইতোমধ্যেই অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। লড়াইয়ে নিহতদের বেশিরভাগই হিজবুল্লাহ যোদ্ধা হলেও, এই সংঘাতের আগুনে ঝলসে গেছে সাধারণ মানুষের জীবনও। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবিক সংকটে পড়েছে। তাদের দিন কাটছে উদ্বাস্তু শিবিরের দুরবস্থায়।
হিজবুল্লাহর দাবি, তারা গাজায় হামাসের সমর্থনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা এই সহিংসতা থামাবে না বলেও জানিয়েছে সংগঠনটি। দুই পক্ষের এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের জটিল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে আরও কঠিন করে তুলছে, যেখানে ইরান এই দুই সংগঠনের শক্তিশালী সমর্থক।
সম্প্রতি ইসরাইল সরকার গাজা থেকে নজর সরিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের দিকে মনোযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপরই পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের মাধ্যমে লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালায় ইসরাইল। এ ঘটনার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এটি ছিল হিজবুল্লাহর ওপর বড় ধরনের আক্রমণের পূর্বপ্রস্তুতি।
গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ইসরাইল লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হামলা শুরু করে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল, যেখানে হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি। এই ধারাবাহিক আক্রমণে একদিনেই নিহত হন ৪৯২ জন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর এই সংঘর্ষ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। শান্তির আশায় বুক বাঁধলেও, এই পরিস্থিতিতে স্বস্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে লেবাননের সাধারণ মানুষের জন্য।