ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়াসহ এশিয়াজুড়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, তার শাসনধারা আগের চেয়েও বেশি স্বৈরতান্ত্রিক হতে পারে। শনিবার ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৪’ সম্মেলনে এই বিষয়টি নিয়ে প্যানেল আলোচনায় উঠে আসে নানা দৃষ্টিভঙ্গি।
টাইম সাময়িকীর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক চার্লি ক্যাম্পবেল এই আলোচনার সঞ্চালনা করেন। আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্রিস্টিন ফেয়ার, পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অশোক সজ্জনহার এবং চায়না ফরেন অ্যাফেয়ার্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিপিং শিয়া।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতা এবং ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক হয়তো বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখোমুখি হবে না। তবে তার প্রশাসন আরও কঠোর ও একনায়কতান্ত্রিক হতে পারে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্রিস্টিন ফেয়ার বলেন, “ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে একনায়ক ছিলেন। এবার তার মন্ত্রিসভায় আরও বেশি অনুগতদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তিনি একনায়কতন্ত্রকে আরও দৃঢ় করবেন। দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে তার মনোযোগ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রার ওপর থাকবে। তবে একনায়কদের পররাষ্ট্রনীতি সাধারণত আবেগতাড়িত হয়ে থাকে, যা ভবিষ্যতে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করবে।”
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরীর মতে, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। “যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেখে। তবে পাকিস্তানকে পুরোপুরি দূরে ঠেলে দেওয়ার ইচ্ছা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। ফলে ভবিষ্যতে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা কম।”
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো-ক্ষমতাসীন বা বিরোধী-কারও জন্যই ট্রাম্পের ফিরে আসা বড় সুফল বয়ে আনবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনেকাংশে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং কৌশলগত চাহিদার ওপর নির্ভর করবে।”
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অশোক সজ্জনহার মন্তব্য করেন, “বাইডেন প্রশাসনের সময়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্ব বেড়েছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এটি অব্যাহত থাকবে, বরং আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।”
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার বিষয়ে চায়না ফরেন অ্যাফেয়ার্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিপিং শিয়া বলেন, “চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্প বাস্তবায়ন করলে তা শুধু বাণিজ্যে নয়, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায়ও প্রভাব ফেলবে।”
কোথায় দৃষ্টি রাখা উচিত?
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ওপর মার্কিন প্রভাব কিছুটা কমে যেতে পারে। চীনের মোকাবিলায় ভারতকে আরও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তবে এই নীতিগুলো আবেগতাড়িত এবং লেনদেনভিত্তিক হওয়ায় ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও অস্থির হতে পারে।
এর প্রভাব কী হতে পারে?
বাংলাদেশের জন্য বিশেষজ্ঞরা বড় ধরনের চাপ বা সুবিধার সম্ভাবনা দেখছেন না। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং কৌশলগত স্বার্থ বজায় রাখাই দক্ষিণ এশিয়ার মার্কিন নীতির মূল বিষয় হতে পারে। তবে চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতা এবং বাণিজ্যযুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
উপসংহার- ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নির্ধারিত হবে তার নেতৃত্বের ধারা এবং আন্তর্জাতিক নীতির অগ্রাধিকার অনুযায়ী। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তার শাসন বেশি অনিশ্চিত ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ হবে।