ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর মন্ত্রিসভার এক সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজন ব্রাজিলীয় সেনাবাহিনীর সদস্য এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জাইর বলসোনারোকে অল্প ব্যবধানে পরাজিত করে লুলা দা সিলভা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। তবে বলসোনারো এই পরাজয় মেনে নেননি। তদন্তে জানা গেছে, লুলা দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে, ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তাকে এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ডো অ্যালকমিনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা-
তদন্তে পাওয়া নথি অনুসারে, লুলা এবং অ্যালকমিনকে গুলি করা বা বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ষড়যন্ত্রে নতুন নির্বাচনের জন্য দুই অবসরপ্রাপ্ত সেনা জেনারেল, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অগাস্টো হেলেনো এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রাগা নেটোকে দায়িত্বে আনার পরিকল্পনা ছিল। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতিকে বিষ প্রয়োগ বা বিস্ফোরক ডিভাইস দিয়ে হত্যারও চেষ্টা করা হয়েছিল।
পুলিশ জানায়, এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা সরাসরি লুলার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বানচালের উদ্দেশ্যে করা হয়। বলসোনারোর সমর্থকরা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলাফল ঘোষণার পর তারা কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক হাজার দাঙ্গাকারীকে আটক করে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা সংকট-
এই ঘটনায় ব্রাজিলের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রেসিডেন্ট লুলাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরেছে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার গভীর সংকট। এর ফলে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে দূরত্ব বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের ষড়যন্ত্র শুধু ব্রাজিলের গণতন্ত্র নয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। বলসোনারোর সমর্থকদের একাংশের মধ্যে এখনও বিদ্রোহী মনোভাব বিদ্যমান। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট লুলার সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্গঠন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উত্তেজনা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের দিকে।