ইউরোপের বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা এবং নতুন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়টি মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তবে বৈঠকের অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিষয়ে নেওয়া নীতির কারণে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ফক্স নিউজে মন্তব্য করেছেন যে, ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড একদিন রাশিয়ার হাতে যেতে পারে, যা ইউরোপের নেতাদের জন্য নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে। ইউক্রেনের শান্তি আলোচনা এবং ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি- ন্যাটো জোটের রাশিয়ার প্রতি কঠোর অবস্থানকে একেবারে বিপরীত দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ব্রাসেলসে ন্যাটো বৈঠকে লাটভিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রিস স্প্রুডস বলেছেন, এমন সময় এসেছে, যখন একটি স্পষ্ট ও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট ট্রাম্পের মন্তব্যের বিষয়ে কিছু না বললেও, তিনি কেবল এটুকু বলেছেন, আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি মন্তব্য করেছেন, ন্যাটোতে ইউক্রেনের একটি ন্যায্য স্থান রয়েছে, তবে এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হতে পারে। একই কথা জানিয়েছেন এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হ্যানো পেভকুরও। তবে তাদের কেউই মস্কোর কাছ থেকে আত্মসমর্পণের ঝুঁকি সম্পর্কিত প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া নতুন সিদ্ধান্ত ইউরোপ ও ইউক্রেনের জন্য উদ্বেগজনক। ব্রিটেনের থিঙ্ক ট্যাংক ‘রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট’ এর সামরিক বিজ্ঞানের পরিচালক ম্যাথিউ স্যাভিল মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল- আর এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে ইউরোপ ও ইউক্রেনকে।
এছাড়া, বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৯০ মিনিটের ফোনালাপ করেন, যা ন্যাটো নেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ এই বিষয়টি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করতে গিয়ে ক্যামেরার সামনে থেকে সরে যান।
এমন পরিস্থিতিতে, ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়ানোর জন্য নিজেদের প্রস্তুতি নিতে বাধ্য হবে। ন্যাটো মহাসচিব রুট সতর্ক করেছেন, যদি আমরা ২ শতাংশের সীমায় আটকে থাকি, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের নিজেদের সুরক্ষা করতে পারব না।