কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ভারত। এই ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিএস) জরুরি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের পর নয়াদিল্লি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ঘোষণা দেয় যার মধ্যে অন্যতম হলো ভারত-পাকিস্তান মধ্যে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভারত সরকার জানায়, পাকিস্তান যদি আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ দমন না করে, তাহলে সিন্ধু পানি চুক্তি আর কার্যকর থাকবে না। সরকার স্পষ্ট ভাষায় জানায়, পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং আরও কিছু কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
পূর্ববর্তী দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় পর্যটকদের বহনকারী একটি বাসে সন্ত্রাসীদের গুলিতে অন্তত ২৬ জন প্রাণ হারান। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই মর্মান্তিক ঘটনার রেশে ভারত সরকার দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক দিক থেকে একাধিক পদক্ষেপ নেয়।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, পাকিস্তানকে শক্ত বার্তা দিতে পাঞ্জাব সীমান্তের আটারি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে যাদের বৈধ নথিপত্র রয়েছে তারা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ওই চেকপোস্ট ব্যবহার করে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন।
এছাড়া, সার্ক ভিসা প্রকল্পের অধীনে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূর্বে যেসব পাকিস্তানি নাগরিক এই প্রকল্পের আওতায় ভিসা পেয়েছিলেন তাদের সেই ভিসা বাতিল বলে গণ্য হবে। বর্তমানে যেসব পাকিস্তানি নাগরিক এই ভিসা নিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন তাদের আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের কঠোর প্রতিক্রিয়া এখানেই শেষ হয়নি। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানি সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ইসলামাবাদে কর্মরত ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদেরও ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
কাশ্মীরের মাটিতে বারবার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা এবং এর পেছনে পাকিস্তানের ভূমিকার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারের হামলার পর ভারত যে কঠোর কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা শুধু আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই নয় আন্তর্জাতিক পরিসরেও এর তাৎপর্য থাকবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সিন্ধু পানি চুক্তির মতো একটি ঐতিহাসিক ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত চুক্তির স্থগিত ঘোষণা পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এক ধরনের কৌশল হতে পারে। তবে এই সিদ্ধান্ত দক্ষিণ এশিয়ার পানিসম্পদ ও রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন।