কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ফের উত্তেজনায় ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। নিয়ন্ত্রণ রেখায় টানা ১১ রাত ধরে চলছে গোলাগুলি। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির শঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। পাকিস্তানও পাল্টা প্রস্তুতি নিচ্ছে। সীমান্তে আধুনিক অস্ত্র নিয়ে মোতায়েন করা হচ্ছে সেনা সদস্য।
এই প্রেক্ষাপটে পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেনানিবাসে রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত হয় ব্ল্যাকআউট মহড়া। রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পুরো এলাকা রাখা হয় অন্ধকারে। মহড়ার আগে শহরজুড়ে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়। বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ রাখা হয় নির্ধারিত সময়জুড়ে।
সেনানিবাসের প্রধান নির্বাহী জেলা প্রশাসক ও বিদ্যুৎ বিভাগকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড জানায়, যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রস্তুতি হিসেবেই এই মহড়া। সাইরেন বাজিয়ে শুরু হয় ব্ল্যাকআউট। ধাপে ধাপে নিভিয়ে ফেলা হয় সব আলো।
মহড়া শেষে শহরে ছড়িয়ে পড়ে থমথমে পরিবেশ। অনেকেই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। অতীতে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ দেখা প্রবীণরা বলছেন, এই প্রস্তুতি সত্যিকারের যুদ্ধের ইঙ্গিতও হতে পারে।
ফিরোজপুরে কাজ করতে আসা বহু মানুষ আতঙ্কে আছেন। উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা সন্দীপ কুমার জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আত্মীয়স্বজন ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন। সীমান্ত এলাকায় বহিরাগতদের নিয়ে সন্দেহও বাড়ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী অনুজ মিত্তাল বলেন, পেহেলগামের হামলার পর থেকেই ব্যবসা বন্ধ। বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। মানুষ ঘরে ঘরে রেশন মজুত করছে, অনেকে আবার ঋণ করে।
তিনি আরও বলেন, সেনারা বাজারে না আসায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ২৬ জন। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। এর জবাবে ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে, আর পাকিস্তান সিমলা চুক্তি বাতিল করে ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। স্থগিত হয় বাণিজ্যও।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। জবাবে পাকিস্তানও ‘আবদালি’ নামে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে, যার পাল্লা ৪৫০ কিলোমিটার।
সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘনিয়ে উঠেছে। সীমান্তে গোলাগুলি, ব্ল্যাকআউট মহড়া, চুক্তি স্থগিত—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মনে জেগেছে একটাই প্রশ্ন— সামনে কী অপেক্ষা করছে?