ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান কো-অপ সুপারমার্কেট ইসরাইলি সব পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সাধারণ সভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে ৭৩ শতাংশ সদস্যের সমর্থন পাওয়া গেছে।
সংস্থাটির সদস্যদের মতে, গাজায় ইসরাইলের ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ ও ‘গণহত্যার’ প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত একটি নৈতিক অবস্থান এবং জবাবদিহির প্রতীক। তারা বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে।
যদিও প্রস্তাবটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়, কো-অপের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতভাবে নীতিমালাগুলোর পর্যালোচনা করে থাকে এবং সদস্যদের মূল্যবোধ ও অবস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী গ্রীষ্মেই এ পর্যালোচনা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরপরই ইসরাইলি পণ্য সরানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
প্রস্তাবটি প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন (PSC) এর সহায়তায় উত্থাপিত হয়। সংগঠনটি ভোটের ফলাফলকে যুক্তরাজ্যের জনগণের ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থানের প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেছে। PSC মুখপাত্র লুইস ব্যাকন বলেন, “কো-অপ এখন দেখিয়েছে, সাধারণ মানুষ ইসরাইলের বর্ণবাদী অর্থনীতি মেনে নিতে রাজি নন।”
এর আগেও কো-অপ ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছিল। ২০০৭ সালে তারা প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে অবৈধ বসতি স্থাপনের প্রতিবাদে ইসরাইলি পণ্য বর্জনের ঘোষণা দেয়। এছাড়া ২০২২ সালে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পণ্য বিক্রিও বন্ধ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্বজুড়ে যখন গাজার পরিস্থিতি নিয়ে করপোরেট সহযোগিতার প্রশ্ন উঠছে, ঠিক তখনই এই সিদ্ধান্ত এসেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি অভিযানে ৫৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। কো-অপ সদস্যদের দাবি- এমন মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ইসরাইলি পণ্য বিক্রি প্রতিষ্ঠানটির মানবাধিকার ও নৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কো-অপের এই পদক্ষেপ যুক্তরাজ্যের অন্যান্য খুচরা বিক্রেতাদের ওপরও নৈতিক চাপ তৈরি করবে।