ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের দৃঢ় অবস্থান পুনরায় ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ইরান সবসময় পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল গড়ে তোলার পক্ষে কাজ করে এসেছে এবং এই ধরনের অস্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সারদাশতের মতো রাসায়নিক হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা একটি অপরিহার্য শর্ত।
রবিবার (২৯ জুন) রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় যুদ্ধ দিবসে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সারদাশত শহরে ১৯৮৭ সালের রাসায়নিক হামলার ৩৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই বার্তা দেন আরাঘচি। ১৯৮৭ সালের ২৮ জুন, সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে সারদাশতে মাস্টার্ড গ্যাস হামলায় ১১৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৮,০০০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যান।
আরাঘচি অভিযোগ করেন, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশগুলো সাদ্দামের রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচিতে রাসায়নিক পদার্থ, প্রযুক্তি এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করে সহায়তা করেছিল। তিনি বলেন, পশ্চিমা সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা সাদ্দামকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে নৃশংসতা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় ইরানি নারী, শিশু, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা নিহত হয়েছেন। তিনি ইসরায়েলকে ‘এই যুগের সবচেয়ে ধূর্ত ও দুষ্ট সন্ত্রাসী’ হিসেবে অভিহিত করেন। আরাঘচি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদ লঙ্ঘনের প্রতি সমর্থন দিয়ে চলেছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েলের হামলা ইরানের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, বিশেষ করে শিল্প রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন সুবিধাগুলোকে লক্ষ্য করে, যা মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছে। ইরান এই হামলার তদন্ত ও নিন্দার জন্য রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থার (ওপিসিডব্লিউ) নির্বাহী পরিষদের জরুরি অধিবেশন আহ্বান করেছে।
১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক হামলা শুরু করে, যাতে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ২২ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিয়ে তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়, যা জাতিসংঘের সনদ এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) লঙ্ঘন। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইরান ২৩ জুন কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এরপর ২৪ জুন ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
আরাঘচি তার বার্তায় ইরানি জনগণের দৃঢ়তা, ঐক্য এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এমন একটি বিশ্ব গড়ে উঠবে যেখানে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের শিকার কেউ হবে না এবং শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হবে।