—১০৭ বিবিসি কর্মীসহ ৩০০ গণমাধ্যমকর্মীর খোলা চিঠি; ‘প্যালেস্টাইনবিরোধী বর্ণবাদে’ জড়িত থাকার দাবি
ব্রিটিশ সম্প্রচার সংস্থা বিবিসির বিরুদ্ধে গাজা যুদ্ধ কাভারেজে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন এরই ১০৭ জন কর্মী। এ ছাড়া আরো প্রায় ২০০ গণমাধ্যমকর্মী, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বিবিসির ওপর ‘ইসরায়েলের পক্ষে প্রচার চালানো’ ও ‘প্যালেস্টাইনবিরোধী বর্ণবাদে’ জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার বুধবারের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় বিনোদন সাময়িকী ডেডলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি খোলা চিঠির মাধ্যমে বিবিসির শীর্ষপর্যায়ের সম্পাদনা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ জানান কর্মীরা।
কী বলা হয়েছে চিঠিতে?
চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, বিবিসি সম্প্রতি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা “একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ” বলেই মনে হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, সম্প্রচারযোগ্য হলেও ‘Gaza: Medics Under Fire’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র বিবিসি বাতিল করে দেয়, যা এই সংস্থার প্যালেস্টাইনবিরোধী অবস্থানেরই বহিঃপ্রকাশ।
চিঠিতে আরো বলা হয়:
“২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর অনেকটাই বিবিসি সেন্সর করেছে কিংবা ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। বিবিসির সম্পাদকীয় মানদণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ। সংঘাতের নিরপেক্ষ, বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে বিবিসি।”
কর্মীরা যুক্তরাজ্য সরকারের ভূমিকা, ইসরায়েলকে অস্ত্র রপ্তানির প্রক্রিয়া এবং এর আইনি ও মানবাধিকার ভিত্তিক প্রভাব বিশ্লেষণে বিবিসির নীরবতা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তাদের ভাষায়:
“দর্শক-শ্রোতারা বুঝে গেছেন, বিবিসির ফিলিস্তিন-ইসরায়েল প্রতিবেদন বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত, এবং এটা সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।”
স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে কে কে?
চিঠিতে নাম প্রকাশ না করে স্বাক্ষর করেছেন ১০৭ বিবিসি কর্মী, যারা বিভিন্ন বিভাগে (খবর, প্রযোজনা, গবেষণা, সম্পাদনা) কাজ করেন। যদিও গোপনতা বজায় রাখা হলেও চিঠিতে খোলাখুলি সমর্থন জানিয়েছেন একাধিক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। তাদের মধ্যে রয়েছেন:
-
খালিদ আবদাল্লাহ- জনপ্রিয় ব্রিটিশ-ইজিপশীয় অভিনেতা
-
মিরিয়াম মারগোলিয়েস- জ্যেষ্ঠ অভিনেত্রী ও লেখক
এ ছাড়া ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং একাধিক চলচ্চিত্র সংস্থার প্রতিনিধিরাও এ চিঠির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
‘ফ্যাক্ট বনাম প্রচারণা’ বিতর্কে বিবিসি-
গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বজুড়ে মিডিয়াগুলোর কাভারেজ নিয়েই তীব্র বিতর্ক চলছে। তবে বিবিসির বিরুদ্ধে এমন অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদ বিরল। সংস্থাটির ভেতর থেকেই কর্মীরা বলছেন, “সাংবাদিকতা মানে সত্য তুলে ধরা। অথচ আমরা নিজেরাই সেটি করতে পারছি না।”
বিবিসির পক্ষ থেকে এখনো এই চিঠির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।