দেশজুড়ে সংঘটিত ধারাবাহিক হামলার জবাবে পাল্টা অভিযানে অন্তত ৮০ জন সশস্ত্র জঙ্গিকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১ জুলাই) টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় এমন তথ্য দেন দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সুলেইমান ডেম্বেলে।
ডেম্বেলে জানান, “দেশের যেসব স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষ হয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্রোহীদের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” টেলিভিশনে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে নিহতদের মরদেহ, উদ্ধারকৃত অস্ত্র, মোটরসাইকেল ও ধ্বংসপ্রাপ্ত যানবাহনের চিত্র তুলে ধরা হয়।
এদিকে আল-কায়েদাপন্থী জঙ্গি সংগঠন জামায়াতে নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (JNIM) এই সিরিজ হামলার দায় স্বীকার করে জানিয়েছে, তারা ‘সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত অভিযানে’ তিনটি সামরিক ব্যারাক এবং ডজনখানেক সামরিক স্থাপনা দখলে নিয়েছে।
সাত শহরে একযোগে হামলা-
মালির সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সাতটি শহরে গতকাল এই ধারাবাহিক হামলা চালানো হয়। এতে লক্ষ্যবস্তু হয় পশ্চিম মালির ডিবোলি, কায়েস ও সান্দারে, রাজধানী বামাকোর উত্তর-পশ্চিমে নিয়োরো দ্যু সাহেল ও গোগুই এবং মধ্য মালির মোলোডো ও নিয়োনো শহর। সেনাবাহিনীর দাবি, এসব শহরে গোলাবর্ষণ ও বিস্ফোরণ চালিয়েছে জঙ্গিরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনীতিকরা হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কায়েস শহরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “ভোরে হঠাৎ গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। গভর্নরের বাসভবনের দিকে আমাদের বাড়ি থেকেই ধোঁয়া উড়তে দেখি। ভয়ংকর গোলাগুলি হচ্ছিল।” অপর এক বাসিন্দা জানান, তিনি আতঙ্কে নিজ বাড়িতে আশ্রয় নেন।
নিয়োরোর এক রাজনীতিক ফেসবুকে লিখেছেন, “আমরা আতঙ্ক নিয়ে ঘুম থেকে উঠেছি। নিয়োরো, সান্দারে ও গোগুইতে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলি চলছে।”
দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিবাদের সঙ্গে লড়াই-
মালি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আল-কায়েদা ও আইএস সংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। দেশটির উত্তরে টুয়ারেগ বিদ্রোহীদের উপস্থিতিও জটিলতা বাড়িয়েছে। যদিও ২০১৩ সালে ফরাসি সেনাবাহিনী মালিতে হস্তক্ষেপ করেছিল, তবে জঙ্গি হামলা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি বরং সম্প্রতি ফ্রান্স ও জাতিসংঘ মিশনের বিদায়ের পর পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলজুড়ে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। মালির পাশাপাশি নাইজার ও বুরকিনা ফাসোতেও এই সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।