ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রায় তিন বছর পর প্রথমবারের মতো ফোনে দীর্ঘ আলোচনায় মিলিত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) অনুষ্ঠিত এই দুই ঘণ্টার কথোপকথনে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে বলে ক্রেমলিন জানিয়েছে। এটি ছিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর তাঁদের প্রথম সরাসরি যোগাযোগ। সূত্র: রয়টার্স
ইউক্রেন ইস্যু: পুরোনো অবস্থানে দুই নেতা-
ক্রেমলিনের বিবৃতি অনুসারে, পুতিন মাখোঁকে বলেছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিমা দেশগুলোর নীতির প্রত্যক্ষ ফলাফল। তিনি দাবি করেছেন, পশ্চিমারা বছরের পর বছর ধরে রাশিয়ার নিরাপত্তা স্বার্থ উপেক্ষা করেছে এবং ইউক্রেনে একটি ‘রাশিয়া-বিরোধী প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করেছে। পুতিনের মতে, ইউক্রেনের সঙ্গে যেকোনো শান্তিচুক্তি হতে হবে ‘দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যাপক’, যা ‘নতুন ভূখণ্ডগত বাস্তবতা’র ওপর ভিত্তি করে হবে। এর আগেও তিনি বলেছেন, শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনকে রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলো মেনে নিতে হবে।
অন্যদিকে, মাখোঁ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি ফ্রান্সের দৃঢ় সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি ইউক্রেনে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাত নিরসনের জন্য আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, মাখোঁ মনে করেন, ইউক্রেনেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে তারা ভূখণ্ড ছাড় দেবে কি না। ফোনালাপের আগে ও পরে মাখোঁ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলে আলোচনার বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেছেন। এছাড়া তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও এই ফোনালাপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: কূটনৈতিক সমাধানের প্রতি জোর-
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা ছিল ফোনালাপের অন্যতম প্রধান বিষয়। মাখোঁ ইরানের পারমাণবিক ইস্যু, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং এই অঞ্চলে তাদের ভূমিকা নিয়ে কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ফ্রান্স ও রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি ইরানকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি উন্নয়নের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ সংক্রান্ত চুক্তির (এনপিটি) আওতায় ইরানের দায়বদ্ধতা পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। উল্লেখ্য, গত মাসে ইরানের পার্লামেন্ট একটি আইন পাস করেছে, যার মাধ্যমে আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল, অভিযোগ করে যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। ইরান এই অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে আসছে।
দুই নেতা ইরান ইস্যুতে তাঁদের প্রচেষ্টা সমন্বয় করতে সম্মত হয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, এই আলোচনা একটি কঠোর ও টেকসই সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হবে।
পটভূমি ও ভবিষ্যৎ-
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার শুরুতে মাখোঁ ও পুতিন নিয়মিত যোগাযোগে ছিলেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে মাখোঁ মস্কো সফরে গিয়ে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তবে ইউরোপের কিছু মিত্র দেশ এই যোগাযোগের সমালোচনা করেছিল। এই ফোনালাপের মাধ্যমে দীর্ঘ বিরতির পর দুই নেতার মধ্যে যোগাযোগ পুনরায় শুরু হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, বর্তমানে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের কোনো পরিকল্পনা নেই, তবে ফোনালাপের মাধ্যমে মতবিনিময় অব্যাহত থাকবে।
দুই নেতা ইউক্রেন ও ইরান ইস্যুতে ভবিষ্যতে আরো আলোচনার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। এই ফোনালাপ মাখোঁর উদ্যোগে হয়েছিল বলে ক্রেমলিন জানিয়েছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইরান ইস্যুতে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।