পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (পিএনবি) থেকে ১৩,৫০০ কোটি টাকার ঋণ প্রতারণার মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত হীরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসি বেলজিয়ামে আটক হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে- এবার কি তাকে ভারতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
চোকসিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছে। বেলজিয়ামের সঙ্গে ভারতের কোনো দ্বিপাক্ষিক প্রত্যার্পণ চুক্তি না থাকলেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চুক্তি এবং ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
২০১৮ সালে ভারতের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক প্রতারণা মামলাটি প্রকাশ্যে আসে, যেখানে পিএনবির কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার সহযোগিতায় চোকসি ও তার ভাগ্নে নীরব মোদী বিপুল অঙ্কের ঋণ নেন এবং তা না মিটিয়েই বিদেশে পালিয়ে যান। চোকসি বর্তমানে অ্যান্টিগার নাগরিক, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছিলেন এবং ভারত সরকারের প্রত্যার্পণ প্রচেষ্টা আইনি জটিলতায় আটকে ছিল।
গত শনিবার চোকসিকে বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার করা হয়। সূত্র জানায়, সিবিআই তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে ভারতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ শুরু করেছে। সিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “এটি একটি অগ্রগতি। এবার আমরা আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে ভারতে ফিরিয়ে আনার নতুন সুযোগ পেয়েছি।”
চোকসিকে ভারতে ফেরত আনার ক্ষেত্রে এখনও কিছু আইনি চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
- বেলজিয়ামের আইনি প্রক্রিয়া: প্রত্যার্পণ চূড়ান্ত হওয়ার আগে চোকসি বেলজিয়ামের আদালতে আইনি লড়াই করতে পারেন, যা দীর্ঘ সময় নিতে পারে।
- অ্যান্টিগা নাগরিকত্ব: চোকসির বর্তমান নাগরিকত্ব অ্যান্টিগার। তাই তিনি দাবি করতে পারেন যে তাকে দেশে ফেরানো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করবে।
- ভারতের সঙ্গে প্রত্যার্পণ চুক্তির অনুপস্থিতি: বেলজিয়ামের সঙ্গে ভারতের প্রত্যক্ষ প্রত্যার্পণ চুক্তি না থাকায় পুরো বিষয়টি চলবে কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন আইন অনুযায়ী।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সিবিআই মনে করছে, এইবার চোকসিকে ফেরত আনার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল। কারণ:
- তিনি তৃতীয় কোনো দেশে আটক হয়েছেন, যেখানে তার নাগরিকত্ব নেই।
- ভারত ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ, চার্জশিট এবং ইন্টারপোল রেড কর্নার নোটিশ পেশ করেছে।
তার ভাগ্নে নীরব মোদী ইতিমধ্যেই লন্ডনে আটক অবস্থায় প্রত্যার্পণ আইনে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
মেহুল চোকসিকে ভারতে ফেরত আনা পুরোপুরি নির্ভর করছে বেলজিয়ামের আদালত ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ওপর। যদিও এটি সহজ নয়, তবে তার আটক হওয়া ভারতের জন্য বড় অগ্রগতি। সরকার এবং সিবিআই এখন কূটনৈতিক ও আইনি সব পথেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য।